হেফাজত সরকার পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের মডেলে তৈরি করতে চেয়েছিল। তাদের আদর্শ হচ্ছে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান। নাশকতা বা উগ্রবাদের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ভিডিও ফুটেজ বা অডিও কথোপকথন থেকে যে তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক চরিত্র আর নেই এবং অধিকাংশ নেতারা হেফাজতকে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে মনে করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
আজ শনিবার হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মো. মাহবুব আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সূত্র মতে, এ পর্যন্ত হেফাজতের ১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০১৩ সালে এবং সম্প্রতি হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় করা মামলাগুলোর তদন্তে গিয়ে আমরা এই নাশকতাগুলো কারা করছে, কেন করছে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে ডিবি।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, অনেকেই তাদের অরাজনৈতিক চরিত্রটি বলছেন। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে হেফাজত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এগুলো তাদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পেয়েছি। ২০১৩ সালে বাবুনগরী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে মুফতি ফখরুল জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে পুলিশ এসব ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেছে।
কী করতে চায় হেফাজতে ইসলাম?
ডিবি যুগ্ম-কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, হেফাজত চায় সরকার পতনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের মডেলে তৈরি করতে। তাদের আদর্শ হচ্ছে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান।
যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামকে একটি অরাজনৈতিক সংগঠন বলছি। কিন্তু, বাস্তবে তাদের অনেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং প্রত্যেক দলেরই আলাদা আলাদা এজেন্ডা আছে। সে এজেন্ডাগুলো তারা বাস্তবায়ন করতে চায় হেফাজতের মাধ্যমে।’
‘হেফাজতে ইসলাম এমন একটি সংগঠন, যার ডাকে মাদ্রাসার ছাত্রদের আনা সম্ভব হয়, ব্যাপকহারে লোক সমাগম করা সম্ভব হয় এবং অনেকে অরাজনৈতিক চরিত্রটি ওপরে বলছে, কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে হেফাজতকে ব্যবহার করছে।’
ডিবি যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ‘সেখানে অধিকাংশ নেতারা হেফাজতকে তাদের ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে মনে করছেন। মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার অপচেষ্টা করছেন।’
সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি বলে করেন মো. মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে মুফতি ফখরুল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে আমরা এসব ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ সালে সরকার পতনের লক্ষেই চক্রান্ত হয়। হেফাজতে ইসলামকে কাজে লাগিয়ে একটি অপচেষ্টা চালিয়েছিল। এ বছর আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে আবার যে নাশকতা হলো, সেখানেও একই ধরনের চক্রান্ত হয়েছে। তদন্তে এসবের অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে।’
‘তদন্তে আরও পেয়েছি, হেফাজত নেতারা ইতোমধ্যে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। মাদ্রাসা দখলের মতো অপকর্ম তারা করছে। সারাদেশের ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে হেফাজত। ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা এটি করছে। যেন এর মাধ্যমে তাদের উগ্রবাদী বক্তব্য তারা ছড়িয়ে দিতে পারে’, যোগ করেন তিনি।
হেফাজতের পেছনে কোন রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করছে?
যুগ্ম-কমিশনার এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইসলামপন্থী দলগুলো ছাড়াও মূলধারার দল আছে। তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামসহ আরও অনেক দল এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে। জাতীয়তাবাদী দলের যোগসাজশও আমরা পেয়েছি। তাদের অনেক প্রয়াত নেতার যোগসাজশ রয়েছে। ২০১৩ সালেও ছিল, চলতি বছরেও আছে।
সরকার পতনের বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কওন চুক্তি হয়েছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, এ ধরনের বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি। তাদের সঙ্গে সর্বশেষ কোনো গোপন মিটিং হয়েছে, নাকি ২০১৩ সালের মিটিংয়ের ধারাবাহিকতায় তারা কাজ করছেন, সেগুলোর বিষয়ে এখনো পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন সবারই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এখানে রয়েছে।
অর্থের যোগান দেয় কে?
হেফাজতে কারা অর্থের যোগান দেয় তা তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে অর্থের যোগান আসছে।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, তারা বলেছেন বাইরে থেকেই বেশির ভাগ অর্থ আসে। রাজনৈতিক দল থেকে এ সময় কোনো ফান্ড নেওয়া হয়েছে কিনা এ ধরনের কোনো বিষয় এখনো পাওয়া যায়নি। এবার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাইরে থেকে অর্থ এসেছে কিনা বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আয়োজকদের হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন ওয়াজে নিতে বাধ্য করা হয়। যার মাধ্যমে তারা উগ্রবাদী বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে। এছাড়া মাদরাসার গরিব ছাত্রদের ব্যবহার করে অনুদান-সহায়তা আদায়ের নামে হেফাজত নেতারা বিত্তবান হয়েছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৯২৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ