চীনের গবেষণাগার থেকে মহামারি করোনাভাইরাস উদ্ভব এবং ছড়িয়েছিল বলে পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন সময় অভিযোগ তুলে এসেছে। যদিও এই অভিযোগ জাতিসংঘসহ বিশ্লেষকরা তেমন কোনো যুক্তি খাড়া করতে পারেনি, পারেনি প্রমাণ করতেও। তবে চীন থেকে প্রথম করোনা ছড়ালেও এই সংকটকালীন মুহূর্তে চীনের অর্থনীতি ছিল সচল। এমনকি বিশ্লেষক ও গবেষকদের মতে করোনাকালীন সময়ে চীনের অর্থনৈতিক বাজার অনুকূলে ছিল। করোনা মহামারির কারণে ইউরোপ যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করে সেসব দেশের সাথে বাণিজ্য বড় রকমের ধাক্কা খেলেও, চীনের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যে সেভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। মহামারির বছরে একমাত্র দেশ চীন, যে দেশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমদানি রফতানি রেকর্ড বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে মহামারির বছরই ইইউ’র বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদের দেশের স্থান দখলে নিয়েছে চীন।
দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বদলে গেছে সেই পরিস্থিতি। ইইউ’র সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে মার্কিনিদের প্রধানতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে বড় আকারের সংকোচন হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায় চীনের অর্থনীতি। দ্বিতীয়ার্ধে চাঙ্গা অর্থনীতির কারণে ইউরোপীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে চীনে। গত বছর প্রবৃদ্ধি অর্জন করা একমাত্র প্রধান অর্থনীতি চীনে ইউরোপীয় গাড়ি ও বিলাসবহুল পণ্যের চাহিদা বেড়েছিল। এছাড়া চিকিৎসা পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে ইউরোপে রফতানি বেড়েছে চীনের।
ইইউর পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্টেট বলছে, ২০২০ সালে ইউরোপের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ছিল চীন। ২৭টি দেশভুক্ত জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২০ সালে চীন থেকে আমদানি করেছে ৪৬ হাজার ৫শ’ কোটি ডলারের পণ্য, রফতানি করেছে ২০ হাজার ২শ’ কোটি ডলারের পণ্য। দুই দেশের মধ্যে মহামারিতে আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ, রফতানি বেড়েছে ২ শতাংশের কিছু বেশি। আমদানি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং রফতানি ২ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধির জেরে যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে ইইউর প্রধান বাণিজ্য অংশীদার হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন।
চীনে ইইউর রফতানি ২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১০ হাজার ২৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার।
আইএনজি জার্মানির অর্থনীতিবিদ কারস্টেন ব্রজেস্কি গতকাল সিএনবিসিকে জানান, চীনের সঙ্গে ইইউর শক্তিশালী বৈদেশিক বাণিজ্যের কারণ হচ্ছে অঞ্চলটির মহামারী থেকে শক্তিশালীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। ইইউ, যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান অর্থনীতিগুলো যখন মন্দায় ধুঁকছে, তখন প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি অর্থনীতি।
ইউরোস্টেটের প্রতিবেদনটি গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত চীনের উপাত্তের প্রায় কাছাকাছি। গত মাসে চীন প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক উপাত্তে বলা হয়, ২০২০ সালে ইইউ-চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৬৯ হাজার ৬৪০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
গত সোমবার প্রকাশিত ইউরোস্টেটের উপাত্তে দেখা গেছে, চীনের সঙ্গে ইইউর বাণিজ্য ঘাটতি ১৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আমেরিকা এবং ব্রিটেনের জন্য সবচেয়ে বড় রফতানির বাজার, কিন্তু এই দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ব্যাপকভাবে পড়ে গেছে বলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান দপ্তর জানাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আমদানি কমেছে ১৩.২% এবং রফতানি কমেছে ৮.২% । আমেরিকা ২০১৯ সালে ইইউ-র সাথে যে পরিমাণ বাণিজ্য করেছিল গত বছর সেই বাণিজ্যের পরিমাণ বেশ উল্লেখযোগ্য রকম পড়ে গিয়েছিল। এখন ইউরোপের সাথে আমেরিকার বাণিজ্যিক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এগোতে চায় নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেটার মূল্যায়ন করবেন কিনা সেট স্পষ্ট নয়।
এদিকে ইইউ এবং চীন তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার চেষ্টা করছে। দু পক্ষের মধ্যে একটি বিনিয়োগ চুক্তি অনুমোদনের প্রক্রিয়া এখন চলমান রয়েছে যে চুক্তির অধীনে ইউরোপীয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বাজারে আরও বেশি বাণিজ্য করতে পারবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১৫৬
আপনার মতামত জানানঃ