ইমরান খানকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা বেআইনি। তাই তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। জানিয়ে দিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ইমরান যেমন ইসলামাবাদ হাইকোর্টে তার আবেদন জানাতে গিয়েছিলেন, সেটা এবার করতে পারবেন। শুক্রবারই তিনি যেন হাইকোর্ট যান।
সুপ্রিম কোর্টে ইমরান বলেন, তার মাথায় ডাণ্ডা মারা হয়েছে। কোনো অপরাধীকেও তা করা হয় না। ডাণ্ডা মারার পর তার কী হয়েছিল, মনে নেই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ইমরানের গ্রেপ্তারি বেআইনি। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পাকিস্তানের সময় সাড়ে চারটের মধ্যে আদালতে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল, বিচারপতি মোহাম্মদ আলী মাজহার ও বিচারপতি আতহার মিনাল্লাহ’র সমন্বিত সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রায়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ইমরান খানকে পুলিশের গেস্টহাউসেই রাখতে হবে। তবে বন্দি হিসেবে নয়, অতিথি হিসেবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসলামাবাদ পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল সরকারের প্রতি ইমরানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এর আগে এদিন ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে শুনানিতে অংশ নেন বিচারপতিদের তিন সদস্যের এই বেঞ্চ। শুনানি চলাকালে এক পর্যায়ে এক ঘণ্টার মধ্যে ইমরান খানকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইমরান আদালতে প্রবেশের পর কোর্টের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। শুনানি শেষ হওয়া এবং বিচারপতিদের নির্দেশের পর দরজা খোলে।
এর আগে শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল জানিয়েছিলেন, ইমরানকে যেভাবে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা বিচারবিভাগের প্রতি ভয়ংকর অসম্মানজনক ঘটনা।
ইমরানকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় তার দল। বৃহস্পতিবার তার শুনানি শুরু হওয়ার পর ইমরানের আইনজীবী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আগাম জামিনের মেয়াদ বাড়াবার জন্য আবেদন জানাতে এসেছিলেন। তিনি ভেরিফিকেশন পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এটা না করলে আবেদন জানাতে পারতেন না। তখন জানালা ভেঙে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিচারপতিরা জানতে চান, কতজন নিরাপত্তারক্ষী ছিল`? আইনজীবী জবাব দেন, ৯০ থেকে একশ। তারপরই প্রধান বিচারপতি বলেন, ”নিরাপত্তারক্ষীরা কী করে আইন নিজের হাতে নিতে পারে? অনুমতি ছাড়া তারা কীভাবে আদালত থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে পারে?”
প্রধান বিচারপতি এসময় বলেছিলেন, আদালত বিষয়টিকে ‘ব্যাপক গুরুত্ব-সহকারে দেখছে’ এবং ‘আজ একটি যথাযথ রায় দেওয়া হবে’।
এরপর স্থানীয় সময় বিকেল ৫:৪৫ নাগাদ তাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চত্বরে উপস্থিত দেশটির শীর্ষ গণমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদক জানান, বিচারকদের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট ফটক দিয়ে ইমরান খানকে সুপ্রিম কোর্টে আনা হয়।
তাকে নিয়ে আসার আগে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়। পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর রেঞ্জার্সের বিপুল সংখ্যক সদস্য আদালত চত্বরে অবস্থান নেয়।
শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টের ১ নং বিচারকক্ষে, যেসব আইনজীবী ও সাংবাদিক সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন – তাদের ব্যতীত আর কাউকে এসময়ে আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে সেখানে ইসলামাবাদ পুলিশের ডিআইজি (নিরাপত্তা) রয়েছেন বলেও পাকিস্তানের কিছু গণমাধ্যম জানায়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৯ মে) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে দুটি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে এসেছিলেন পিটিআই দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান, আর তখনই আদালত চত্বর থেকে তাকে আটক করে এলিট ফোর্স- পাকিস্তান রেঞ্জার্স।
ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরোর এক দুর্নীতির মামলায় পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিগর্ভ রূপ নেয় পরিস্থিতি। বিক্ষুদ্ধ জনতা পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন- সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে।
নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে ইমরানের সমর্থকদের রাজপথে সংঘর্ষও হয়। এতে অনেকেই হতাহত হয়েছেন।
তবে আজ আদালত প্রাঙ্গণে সমর্থকদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু দেশে নির্বাচন চাই, কোনো নৈরাজ্য চাই না’।
এসডব্লিউএসএস০৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ