পশ্চিমা দেশগুলো যখন কোভিড মহামারিতে নাস্তানাবুদ ঠিক তখন অনেকটাই সাপে বর পেয়েছে চীন। কোভিড নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় বাড়তি সাফল্য দেশটির অর্থনীতি চাঙা করেছে। ২০২৮ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে চীন। এই সুবিধা পাবে ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলোও।
বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেশটির বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে ওঠার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে আগেই। তবে লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলছে, করোনা মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় বাড়তি সাফল্য দেশটিকে বৃহত্তর অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া তরান্বিত করেছে। করোনার কারণে কয়েকবছর আগেই তারা এই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি ও মহামারিসৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে স্পষ্টতই লাভবান হয়েছে চীন। এক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছে অন্যান্য এশীয় দেশও। ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যকে হটিয়ে বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হবে ভারত। ২০৩০-এর দশক পর্যন্ত জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবেই বহাল থাকবে। এরপর জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে ভারত। সে সময় জার্মানি চলে যাবে চতুর্থ থেকে পঞ্চম অবস্থানে। এ তালিকায় বর্তমানে পঞ্চম অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য ২০২৪ সালের মধ্যেই ষষ্ঠ অবস্থানে চলে যাবে।
প্রতিবেদনের বলা হয়, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একক বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে যুক্তরাজ্য। এর পরও ডিজিটাল অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে বেশ এগিয়ে যাবে দেশটি। ওই সময়ে দেশটির জিডিপি হবে ফ্রান্সের চেয়েও ২৩ শতাংশ বেশি।
সিইবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতির সম্মিলিত উৎপাদনে ইউরোপের অবদান ছিল ১৯ শতাংশ। তবে ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে বিভক্তির মাত্রা বাড়লে ২০৩৫ সাল নাগাদ তা ১২ শতাংশ বা তার চেয়েও নিচে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
সিইবিআর জানিয়েছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মহামারিজনিত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সম্ভাব্য সময় বিবেচনায় নিয়েই গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে চীনের বার্ষিক গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হারে। এরপর কিছুটা শ্লথ হয়ে ২০২৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়সীমায় এ হার দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে। অন্যদিকে আসন্ন ২০২১ সালেও মহামারির ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এরপর ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। পরবর্তী বছরগুলোয় এ হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশে।
সিইবিআরের ভাষ্যমতে, ২০০০ সালেও বৈশ্বিক জিডিপিতে চীনের অবদান ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সেখান থেকে ক্রমাগত বেড়ে গত বছর দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০২৩ সাল নাগাদ উচ্চ আয়ের দেশের তালিকায় উঠে আসবে চীন। ওই সময় দেশটির নাগরিকদের মাথাপিছু আয় পৌঁছবে ১২ হাজার ৫৩৬ ডলারের সমপরিমাণে। মাথাপিছু আয় বাড়লেও এ সময় চীনা নাগরিকদের জীবনমান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে অনেক নিচেই থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বর্তমান বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৬৩ হাজার ডলার। যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে তা ৩৯ হাজার ডলারের সমপরিমাণ।
থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব শ্লথ প্রবৃদ্ধির বদলে মূল্যস্ফীতিতেই বেশি দৃশ্যমান হবে। কভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের সরকার বড় অংকের ঋণ নেয়ায় চলতি দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সুদহার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে মহামারির কারণে বৈশ্বিক প্রযুক্তিনির্ভরতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত হবে। এর ধারাবাহিকতায় ২০৩০-এর দশকে গোটা বিশ্ব আরো সবুজ ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থায় পদার্পণ করতে যাচ্ছে।
এসডাব্লিউ/বিবি/নাসি/১৫২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ