গত ৫ মে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর তিন আত্মীয় বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় তাদের জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন টিটিই শফিকুল ইসলাম। এজন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে গত ১৬ মে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
এবার বিনা টিকিটের যাত্রীদের জরিমানা করায় ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) গুলি করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এই হুমকি দেন। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
হুমকি পাওয়া রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শকের (টিটিই) নাম আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু। আর অভিযুক্ত এএসআই’র নাম রুবেল মিয়া। তারা মঙ্গলবার খুলনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকাগামী আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে কর্তব্যরত ছিলেন। ওই ট্রেনেই হুমকির এ ঘটনা ঘটে। কর্তব্যরত ট্রেন পরিচালক (গার্ড) এএসএম ইকবাল মাহবুব ঘটনাটি রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তারবার্তার মাধ্যমে অবহিত করেছেন।
রেল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়। উল্লাপাড়া স্টেশনে পৌঁছার সময় ওই ট্রেনে কর্তব্যরত টিটিই আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু চেক করে বিনা টিকিটের যাত্রীদের জরিমানাসহ টিকিট করিয়ে দিচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন ট্রেন পরিচালক ইকবাল মাহবুব। এ সময় রেলওয়ে পুলিশের একজন কনস্টেবল বলেন, ‘আপনারা আমাদের এদিকে টিকিট চেকিং করতে কেন এসেছেন?’ এ প্রশ্নে ইকবাল ওই পুলিশ সদস্যকে সংযত হয়ে কথা বলতে আহ্বান জানান। এ নিয়ে বচসা শুরু হলে এগিয়ে আসেন ট্রেনে জিআরপি পুলিশের ইনচার্জ (টিজিই) সহকারী উপপরিদর্শক মো. রুবেল মিয়া।
টিটিই মিঠু অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আমরা বিনা টিকিটের যাত্রীদের জরিমানাসহ টিকিট করাতে থাকি। এ সময় একপর্যায়ে এএসআই রুবেল মিয়া আমাকে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।’
ট্রেন পরিচালক ইকবাল মাহবুব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ সময় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে এক পর্যায়ে হ্যান্ডকাপ বের করেন এএসআই রুবেল মিয়া। তিনি টিটিই মিঠুকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আটক করারও হুমকি দেন।’
তিনি জানান, উল্লাপাড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর জামতৈল স্টেশন পর্যন্ত এসব ঘটনা চলতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় গার্ড, টিটিই, অ্যাটেনডেন্টসহ ট্রেনে উপস্থিত যাত্রীরাও হতবাক হয়ে পড়েন।
‘পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আমরা বিনা টিকিটের যাত্রীদের জরিমানাসহ টিকিট করাতে থাকি। এ সময় একপর্যায়ে এএসআই রুবেল মিয়া আমাকে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রুবেল মিয়া বলেন, গুলি করার কথা বলিনি, এটা মিথ্যা।
তিনি বলেন, ওই বগিতে আমার সঙ্গে থাকা কনস্টেবল ফারুকের সঙ্গে গার্ড ইকবাল মাহমুদের কথা হয়। আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় ইকবাল কনস্টেবল ফারুককে বলেন ইনি কে? তখন আমি বলি—‘আমাদের গায়ে পোশাক দেখে চিনতে পারছেন না আমি কে?’ এ সময় পাশে থাকা টিটিই আব্দুল আলীম মিঠু বলে ওঠেন- ‘শালারা টাকা পায় না, এজন্য মাথা খারাপ হয়ে গেছে।’ এ সময় আমি একটু উঁচুস্বরে বলে উঠি—‘এই শালা বললি কাকে? একদম হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেব।’ এ সময় ট্রেনের লোকজন বুঝিয়ে বললে বিষয়টা মিটমাট হয়ে যায়। এছাড়া আর কোনো ঘটনা ঘটেনি। গুলি করার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের টিটিই অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং অত্যন্ত কর্তব্যপরায়ণ। তিনি ওই ট্রেনের বিনা টিকিটের আট যাত্রীকে জরিমানা করতে গেলে দায়িত্বরত এএসআই তাকে গুলি করার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই আমাদের রেলওয়ে পুলিশের এসপি সাহেবকে ওই এএসআইকে প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছি। এ ঘটনায় রেলওয়ের সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু হেনা, সহকারী এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শিপন আলী ও একজন এএসপির সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তাদেরকে বিষয়টি তদন্ত করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হবে।
এ বিষয়ে পাকশী রেলওয়ে পুলিশের এসপি সাহাব উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি সংশ্লিষ্ট টিটিই, গার্ড ও এএসআইকে ডেকে পাঠিয়েছি। তারা ঢাকা থেকে পাকশীতে আসছেন। তারা আসার পর ঘটনার বিস্তারিত শুনে ব্যবস্থা নেব।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩২
আপনার মতামত জানানঃ