সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জে ধর্ষণ মামলায় রুবেল মিয়া (২৩) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আত্মসমর্পণ করলে বিচারক কিরণ শংকর হালদার তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কনস্টেবল রুবেল কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনের ঢাকী ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের রহিছ মিয়ার ছেলে। রুবেল ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দক্ষিণে কর্মরত বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলাটির আইনজীবী অ্যাডভোকেট অশোক সরকার।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এক তরুণীকে রুবেল মিয়া ধর্ষণ করেন বলে মামলায় বলা হয়েছে। একই বছরের ৪ এপ্রিল আদালতে মামলা করেন ওই তরুণী। ১৩ এপ্রিল তরুণীর মেডিক্যাল টেস্ট করা হয়।
অশোক সরকার বলেন, মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আমলে নেন বিচারক।
মামলার বাদী ওই তরুণী (১৭) জানান, আসামি রুবেল এবং তিনি পরস্পরের আত্মীয়। সেই সুবাদে রুবেলের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথাবার্তা হত। স্কুল থেকে আসা-যাওয়ার পথে তাকে প্রায়ই উত্যক্ত করতেন রুবেল। বিষয়টি জানালে রুবেলকে নিষেধ করেন তরুণীর বাবা। একপর্যায়ে রুবেলের বাবা স্থানীয় মুরুব্বিদের নিয়ে তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়ের বয়স ১৮ পূর্ণ না হওয়ায় বিয়েতে রাজি হননি তারা। তখন স্থানীয় মুরুব্বি ও তাদের আত্মীয়স্বজন বসে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলেই তাদের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে রুবেল তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করেন।
তিনি জানান, গতবছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রুবেল তাদের বাড়িতে আসেন। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে তাদের বাড়িরই একটি কক্ষে থেকে যান তিনি। রাত ১০টার দিকে জরুরি কথা আছে বলে মেয়েটিকে কক্ষে ডেকে নেন রুবেল। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্পের একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ করেন। পরদিন সকালে কাউকে কিছু না বলে চলে যান রুবেল। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। কিছুদিন পর তারা জানতে পারেন রুবেল করিমগঞ্জ উপজেলার এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন।
এ ব্যাপারে গতবছরের ৪ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যনালে রুবেলকে আসামি করে ধর্ষণের মামলা করেন ওই তরুণী।
তরুণীর বাবা বলেন, মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের মধ্যে বিয়ে হবে এই বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি হয় তাদের মধ্যে। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরে রুবেলের বাবা মেয়ের সুখের জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করেন। চুক্তিপত্র শেষে নগদ দেড় লাখ টাকাও নেন তারা। তিনি রুবেলের কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির দুর্বলতাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তবে শুধু নজরদারি বাড়ানো নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারলে অনেকাংশে কমানো সম্ভব পুলিশ সদস্যদের অপরাধ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৬
আপনার মতামত জানানঃ