সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
পুলিশ সবচেয়ে বড় ভিলেনে পরিণত হয়েছে এই সময়ে। বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মামলা হয়েছে এবং বিচার চলছে। এর মাঝেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে আসামির স্ত্রীকে মারধর, ঘরের আলমারি ভেঙে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার নাম মাহবুব মোরশেদ। তিনি সীতাকুণ্ড থানায় কর্মরত ছিলেন।
গতকাল রোববার(১৭ এপ্রিল) রাতে মাহবুব মোরশেদকে প্রত্যাহার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার অপেশাদার আচরণ করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল বিকেলে সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম বরাবর ও গত শনিবার চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নারী। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। পরে এসআই মাহবুবকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রামের পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ওই নারীর স্বামী নুরুল ইসলাম পারিবারিক বিরোধের একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।
ওই নারী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে পারিবারিক একটি মামলায় তার স্বামী গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। গত শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্বামীকে ধরতে এসআই মাহবুব মোরশেদ, তার সোর্স নুরুজ্জামান ও সাদা পোশাকে থাকা দুই পুলিশ সদস্য তাদের বাড়িতে যায়।
এ সময় এসআই মাহবুব মোরশেদ ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে না পেয়ে আলমারির চাবি দিতে বলেন। তিনি চাবি দিতে না চাইলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে দুটি লাথি দেন এসআই। ভয়ে তাকে চাবি দেওয়ার পর আলমারিতে থাকা এক লাখ ৪২ হাজার টাকা, আধা ভরি স্বর্ণালংকার, ঘরে থাকা দুটি মোবাইল ফোন সেট ও ছেলে-মেয়েদের জন্মনিবন্ধন, বিভিন্ন শিক্ষা সনদ নিয়ে যান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ সময় বাধা দিলে ছোট ছেলেকে মারধর করা হয়।
এসআই মাহবুব মোরশেদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি আসামি নুরুল ইসলামকে ধরতে গিয়েছিলেন। তবে আসামি পালিয়ে যান। আসামির স্ত্রী ও ছেলেকে মারধর করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে তার দাবি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে এটা বলবো না৷ বলা উচিত এই প্রবণতা আগেও ছিল, এখনো আছে৷ আগে সেভাবে গণমাধ্যমে আসত না, এখন আসছে৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও আগে সেভাবে খেয়াল রাখত না, এখন রাখছে৷ ফলে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে৷
তারা মনে করেন, পুলিশের মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি৷ তাদের কিছু বিভাগ বেড়েছে সত্যি, কিন্তু সেই ব্রিটিশ নিয়মেই তারা চলে৷ আর এই সংস্কারটা হচ্ছে না এর কারণ পুলিশকে অনেক বেশি রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হয়৷ পুলিশের মধ্যে এমন কোন ক্যারিশমেটিক নেতা আসেনি যে তারা নিজের উদ্যোগেই সংস্কার করবে৷ আর আমাদের অর্থনীতি যেভাবে বেড়েছে তাতে পুলিশের মধ্যে এই দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে৷ অনেকেই অল্প দিনে ধনী হতে চান ফলে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ