তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের পতনের পর দেশটির নারী ও শিশুদের নিয়ে শঙ্কা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। নিরাপত্তার পাশাপাশি মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আর এই অনিশ্চয়তার পালে হাওয়া দিচ্ছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সতর্কবার্তা।
তীব্র অপুষ্টিতে ভোগার পর বিনা চিকিৎসায় এ বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে ১০ লাখের মতো শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইউনিসেফ। গত সোমবার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এ আশঙ্কার কথা জানায়।
বিবৃতিতে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিটা ফোর বলেন, আফগানিস্তান জুড়ে ১ কোটি শিশুর বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তা দরকার। বর্তমানে ৪২ লাখের মতো শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না, এরমধ্যে ২২ লাখের মতো মেয়ে শিশু।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তালিবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে চার লাখ ৩৫ হাজার শিশু এবং নারী অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
হেনরিটা বলেন, ‘আফগানিস্তানে বর্তমানে শিশুরা নানা জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা অনুমান করছি, সামনের দিনগুলোতে দেশটির নারী ও শিশুদের আরও বেশি মানবিক সহায়তার প্রয়োজন হবে।’
শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতিসংঘের সংস্থাটি তালিবান এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানায়। আফগানিস্তানে ইউনিসেফের যোগাযোগবিষয়ক প্রধান সামান্থা মোর্ট বলেন, ‘শিশুদের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই আফগানিস্তান পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ স্থানগুলোর একটি।
লন্ডনভিত্তিক অধিকার সংগঠন অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স (এওএভি) জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে বিমান হামলায় হতাহত বেসামরিক মানুষের ৪০ শতাংশই শিশু।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তা স্থগিত
আফগানিস্তানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া স্থগিত করেছে বিশ্ব ব্যাংক। দেশটির শাসন সশস্ত্র গোষ্ঠী তালিবানের হাতে চলে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ব ব্যাংকের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আফগানের চলমান সংকটে উন্নয়নের পাশাপাশি নারীদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা গভীরভাবে দেশটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সেখানে কীভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখা যায় এর উপায় খুঁজছে বিশ্ব ব্যাংক।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করে তালিবান। এরপরই দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি দেশ ছেড়ে পালালে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। গোষ্ঠীটি ঘোষণা দিয়েছে যে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে ইসলামিক শাসন মোতাবেক রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তালিবান। এমন সংকটে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে বিদেশি নাগরিক এবং আফগানরাও। বিমানবন্দরে অনেকটাই জনসমুদ্র।
দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নে কাজে সম্পৃক্ত বিশ্বের অনেক দেশ। তবে পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় আফগানিস্তান ছাড়ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এরমধ্যেই আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তা দেওয়া স্থগিত করলো বিশ্ব ব্যাংক। আফগানিস্তানে বর্তমানে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
হুমকির মুখে আফগান স্বাস্থ্য খাত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার দফতর আরও জানিয়েছে, আফগানিস্তানের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে গত দু’দশক ধরে চিকিৎসার সরঞ্জাম সংগ্রহ করত হু। তারপর সেগুলি পাঠানো হত আফগানিস্তানে। এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল দেশটির স্বাস্থ্যখাত।
কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে যা চলছে কাবুল বিমানবন্দরে তাতে হু-র পাঠানো চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে বিমান অবতরণ করতে পারছে না। অস্ত্রোপচারের যন্ত্রাদি-সহ ৫০০ টন ওজনের নানা ধরনের চিকিৎসার সরঞ্জাম কাবুল বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়েছে।
অথচ সূত্র মতে, আর মাত্র এক সপ্তাহের মতো চিকিৎসার সরঞ্জাম মজুত রয়েছে আফগানিস্তানের হাসপাতালগুলোতে। সে ক্ষেত্রে তালিবান বিমান অবতরণে বাধা দিলে আফগানিস্তানের হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ।
হু-র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রই এত দিন চালু ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে সেই পরিস্থিতি বদলেছে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে নার্স, আয়ারা আর আসতে চাইছেন না। আসতে চাইছেন না মহিলা চিকিৎসকও।
এমনকি, মহিলা রোগীরাও হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার চেয়ে বাড়ির ভিতরেই রোগযন্ত্রণা ভোগ করা শ্রেয় মনে করছেন তীব্র আতঙ্কে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৪৬
আপনার মতামত জানানঃ