ভারতের উত্তর প্রদেশের দিল্লি সীমান্তে রোহিঙ্গাদের মসজিদসহ এক অস্থায়ী শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এতে গৃহহীন হয়ে অসংখ্য পরিবার রাস্তার পাশে বাস করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ওই শিবিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছিল, এবার এবার তা ভেঙেই দেওয়া হলো।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, উত্তর প্রদেশের মদনপুর খাদারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরটিতে কিছুদিন আগেই আগুন লেগেছিল। ফায়ার সার্ভিস সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্যাম্পের অধিবাসীদের বক্তব্য ছিল, বার বার তাদের ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রশাসন তখন সে কথা মানতে চায়নি। সম্প্রতি সেই ক্যাম্পলাগোয়া উত্তর প্রদেশের সেচ দপ্তরের জমিতে তৈরি হওয়া শিবির বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্যাম্পের ভেতর তৈরি করা একটি অস্থায়ী মসজিদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
উত্তর প্রদেশ ইরিগেশন বিভাগ এই অপারেশন চালিয়েছে। তবে মসজিদ ভাঙার কথা প্রশাসন স্বীকার করেনি।
দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জেলা শাসক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কোনো মসজিদ ভাঙা হয়নি। মসজিদের মতো দেখতে কোনো কাঠামো সেখানে ছিল না। কেবলমাত্র টেন্টগুলোই ভাঙা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, একটি টেন্টের ভেতরেই মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল।
জেলা প্রশাসকের দাবি, উত্তর প্রদেশের ইরিগেশন বিভাগের জমির ওপর কোনো অনুমতি না নিয়েই ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল। তাদের সেখান থেকে তুলে নতুন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়াই ছিল উদ্দেশ্য।
বস্তুত, ভারতের উত্তর প্রদেশ প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে নানা আলোচনা করছিল। অভিযোগ, দিল্লি সরকারকে বার বার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও কোনো লাভ হয়নি। শেষপর্যন্ত দিল্লির লেফটন্যান্ট গভর্নরের হস্তক্ষেপে গত মঙ্গলবার দিল্লি প্রশাসন এবং উত্তর প্রদেশ প্রশাসনের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই ক্যাম্প ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সমাজকর্মীদের বক্তব্য, ক্যাম্প ভেঙে দেওয়ার পরে অন্তত ১৬টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা রাস্তার ধারে বসবাস করতে শুরু করেছে। যার ফলে ট্র্যাফিকের সমস্যা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষও সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। তাদের যাতায়াত করতে অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান না হলে সমস্যা আরো বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওই ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের বক্তব্য, তাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। বাধ্য হয়েই তারা অস্থায়ী টেন্ট তৈরি করে থাকছিলেন। কোনোরকম আগাম বার্তা না দিয়ে টেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাদের বহু জিনিসও নষ্ট হয়েছে।
এর আগেও গত বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে রাজধানী নয়াদিল্লির মদনপুর খাদের এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরে ত্রিপল এবং বাঁশের খুঁটিতে নির্মিত একটি অস্থায়ী মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশি মিয়ানমারে কঠোর সামরিক অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা ওই শরণার্থী শিবিরের ৩০০ রোহিঙ্গা আলজাজিরাকে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে মসজিদটি ভেঙে না ফেলার আহ্বান জানানো হলেও তা কর্ণপাত করা হয়নি। শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গারা বলেছেন, সেখানে নামাজ আদায়ের আর কোনও স্থাপনা নেই।
শাস্তির আশঙ্কায় পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, মসজিদটি ফজরের নামাজ আদায়ের এক ঘণ্টা পর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিন বলেছেন, তারা প্রথমে টয়লেট এবং ওয়াশরুম ধ্বংস করেছে। একটি হস্তচালিত পানির পাম্প উপড়ে ফেলেছে। তারপর মসজিদটি গুঁড়িয়ে ফেলা হয়েছে— এসব কিছুই করা হয়েছে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে।
মোহাম্মদ বলেছেন, শরণার্থীরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে কর্মকর্তারা বলেন, তারা জমি দখল করে শিবিরে বসবাসকারী ‘অবৈধ অভিবাসী’। আমি তাদের বলেছি, এটা আমাদের প্রার্থনার জায়গা। কিন্তু তারা বলেছেন, আপনি বেশি কথা বলছেন।
তিনি বলেছেন, হিন্দুদের কাছে মন্দির যেমন, আমাদের কাছে মসজিদও তেমন। তারা যা করেছে তা পুরোপুরি ভুল। কিন্তু আমরা ক্ষমতাহীন।
রোহিঙ্গা শিবিরের পার্শ্ববর্তী কালিন্দি পুলিশ স্টেশনের এক কর্মকর্তা আলজাজিরাকে বলেছেন, ভেঙে ফেলা অবকাঠামোটি মসজিদ ছিল না। এটি নড়বড়ে একটি কুঁড়েঘর ছিল। এ বিষয়ে আর কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
ওই এলাকার মহকুমা মেজিস্ট্রেট প্রবীর সিং বলেছেন, তিনি মসজিদ ভেঙে ফেলার বিষয়ে জানেন না। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই বলে জানান।
দিল্লির কাছের ওই শিবিরে ৫০টির বেশি রোহিঙ্গা পরিবারের বসবাস। গত ১৩ জুন জীর্ণশীর্ন ওই শিবির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যায়। ২০১৮ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো এই শিবিরটি আগুনে ছাই হয়ে যায়। শিবিরের প্রবেশ মুখে ছোট একটি এলাকায় মসজিদটিও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ