পাকিস্তানে এই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র পরিচালিত স্কুল খোলা হয়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতানে রাষ্ট্র পরিচালিত ওই স্কুল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে বলে প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী মুরাদ রাস জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা অর্থ উপার্জনের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শুরু করে নাচ-গান এমনকি যৌনকর্মী হিসেবেও কাজ করতে বাধ্য হতেন। তবে ২০১৯ সালে দেশটির উচ্চ আদালত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে স্বীকৃতি দেয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলে যায়।
পাঞ্জাব প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে ওই স্কুলটি স্থাপন করা হয়। প্রথমদিনেই স্কুলটিতে ১৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের স্কুল আরও চালু করা হবে বলেও জানান প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী
এ ব্যাপারে তিনি টুইটারে জানান, স্কুলের জন্য যা যা দরকার, শিক্ষার্থীদের তার সবই সরবরাহ করা হবে। শিক্ষা গ্রহণের ফলে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের পরবর্তী জীবনে কর্মক্ষেত্রে ভালো চাকরি পেতে সুবিধা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সূত্র মতে, স্কুলটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হবে। স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা পরবর্তীতে আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের জিও টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সূত্র মতে, জাপানে স্কুলের ধাঁচে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পাঠ্যসূচি গ্রহণ করা হবে। পাশাপশি ১০ বছর বয়সী বাচ্চা এবং তার থেকে বেশি বয়সীদের জন্য পাকিস্তানের শিক্ষাবোর্ড অনুসারে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে।
স্কুলের একজন শিক্ষিকা আলিশা শেরাজি জিও নিউজকে এই স্কুলের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এটা আমাদের জন্য বড় একটা দিন। আমি বলব, পাকিস্তানের ইতিহাসে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
আয়শা মুঘাল, একজন বিশিষ্ট তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারকর্মী, টুইটারে লেখেন, এটি দক্ষিণ পাঞ্জাবের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি দারুণ পদক্ষেপ।
যদিও পাকিস্তানের রক্ষণশীল এলাকাগুলোতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অচ্ছুৎ হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। এমনকি লোকলজ্জার ভয়ে তৃতীয় লিঙ্গের শিশুদের মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বৈষ্যমের জন্য তৃতীয় লিঙ্গের শিশুরা সাধারণ স্কুলগুলোতে ভর্তি হতে সংকোচ বোধ করে।
তবে এর আগেও তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খোলা হয়েছিল পাকিস্তানে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে তৃতীয় লিঙ্গদের স্কুল খোলা হয়ে৷
পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর সিটিতে বেসরকারি সংস্থা এক্সপ্লোরিং ফিউচার ফাউন্ডেশন (ইএফএফ) ‘দ্য জেন্ডার গার্ডিয়ান’ নামের এ স্কুল উদ্বোধন করে৷ পাকিস্তানে সংস্থাটির এটিই প্রথম প্রকল্প ছিল।
স্কুলের মালিক আসিফ শাহজাদ বলেছিলেন, বিশ্বে মুসলিম কোনো দেশে হিজড়াদের একমাত্র স্কুল ছিল সেটি৷ এনজিওটি তাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা সনদ দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছে, যাতে তারা চাইলে অন্য কোথাও চাকরির আবেদন করতে পারেন৷ স্কুলটিতে ভর্তির কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই৷ আর এতে আপাতত চালু হয়েছে মোট আটটি বিভাগ৷ সামনেই স্কুলটিতে মূলধারার শিক্ষা চালুর প্রচেষ্টা রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন৷
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ