কদিন আগেই ছাত্রলীগের চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে গ্রামবাসীদের এক তুলকালাম ঘটনা ঘটেছে। যেটার রেশ এখনো রয়ে গেছে। এরইমধ্যে শোনা গেলো বগুড়ার নন্দীগ্রামে একজনের বাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা ও চাঁদা দাবি করার অভিযোগ এনে ১২ ছাত্রলীগকর্মীর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নন্দীগ্রামে নির্মাণাধীন ওই বাড়িটি ছিল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদের। তিনিই চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার এজাহারভুক্ত দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার ছোট ডেরাহাড় গ্রামের আব্দুস সামাদ ও আতোয়ার রহমান।
আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চত করে বলেন, সদর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, নন্দীগ্রাম সদর ইউনিয়নের ছোট ডেরাহাড় গ্রামের ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ ইট দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ কর্মী আল-জাহিদসহ ১২ জন সেখানে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই টাকা না দিলে বাড়ি নির্মাণ করতে বাধা দেন তারা। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদের ভাতিজা সোহান আলীকে মারধর করেন তারা। পরে আহত সোহান আলীকে (২৫) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় সদর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রশিদ বাদী হয়ে উপজেলা স্বেচ্ছা সেবকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ও ছাত্রলীগকর্মী আল-জাহিদসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় চাঁদাবাজি মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন আহমেদ বলেন, ‘চাঁদাবাজির ঘটনা মিথ্যা। ষড়যন্ত্র মূলকভাবে এ মামলা করা হয়েছে। আর তারা ছাত্রলীগের কর্মী, কিন্তু কোন পদে নেই।’
নন্দীগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ মাঠে রয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি দিনদিন মাত্রা চাড়িয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদের দ্বারা গঠিত এই রাজনৈতিক সংগঠনটি এখন এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রুপ নিয়েছে। ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে আতঙ্কে আছে দেশবাসী। তারা মনে করেন, ছাত্রলীগ দেশের প্রচলিত আইনের উর্ধে চলে গেছেন যার ফলে কোনো জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসিত হাতের ভূমিকা উল্লেখ করতে চান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ছাত্রলীগ সংগঠনটির ছাত্রদের ধীরে ধীরে উগ্র এবং একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীতে রুপদানের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের অনৈতিক মদদ ও উস্কানি। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের ব্যবহার করে ফায়দা নিতে গিয়ে ছাত্রলীগকে এমনি এক সংগঠনে পরিণত করেছেন যাদের লাগাম টেনে ধরা এখন মুশকিল হয়ে পড়েছে। এবিষয়ে দেশের অসুস্থ রাজনীতিকে দায় দিতে চান সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২২
আপনার মতামত জানানঃ