 প্রতি ডিসেম্বরেই বছরের সেরা দেশ বাছাই করে দ্য ইকোনমিস্ট। তবে ধনী, সুখী বা সবচেয়ে প্রভাবশালী দেখে এই বাছাই করা হয় না। বিগত ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করে যে দেশটি তাকেই বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাছাই করা হয়। এবার সেই গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশ।
প্রতি ডিসেম্বরেই বছরের সেরা দেশ বাছাই করে দ্য ইকোনমিস্ট। তবে ধনী, সুখী বা সবচেয়ে প্রভাবশালী দেখে এই বাছাই করা হয় না। বিগত ১২ মাসে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করে যে দেশটি তাকেই বর্ষসেরা দেশ হিসেবে বাছাই করা হয়। এবার সেই গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশ।
সদ্য স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশকে ২০২৪ সালে বর্ষসেরা দেশের তালিকায় প্রথম হওয়ার মুকুট দিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এ বছরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ঘটনাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এসব তথ্য নিজেই প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি। সেখানে বলা হয়েছে, এবারের সেরা দেশ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তালিকায় ছিল পাঁচটি দেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড এই তালিকায় ছিল। শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমটির সংবাদদাতাদের প্রবল বিতর্কের মধ্যে বর্ষসেরা দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে ২০২৩ সালে এ তালিকার শীর্ষে ছিল গ্রিস। দীর্ঘ আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠে পুনরায় সরকার নির্বাচনের জন্য গতবছর বর্ষসেরার মর্যাদা পেয়েছিল গ্রিস। আর এ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশের পথ উন্মোচনের জন্য বর্ষসেরা হলো বাংলাদেশ। আর রানার আপ হয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া সিরিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যে দুটি দেশ স্বৈরশাসক হটিয়ে তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এরমধ্যে পোল্যান্ডে ডনাল্ড টাস্কের নতুন প্রশাসন, যারা ২০২৩ সালে সংসদীয় নির্বাচনের পরে গঠিত হয়। তারা দেশকে পূর্বসূরিদের ফেলে যাওয়া অবস্থা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, আমাদের বিজয়ী বাংলাদেশও একজন স্বৈরশাসককে উৎখাত করেছে। আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের ভূখণ্ডটিকে প্রায় ১৫ বছর শাসন করেছিলেন হাসিনা।
যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়কের একজন কন্যা। একসময় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু পরে দমনপীড়ন শুরু করেন, নির্বাচনে জালিয়াতি করেন, বিরোধীদের কারাগারে ভরেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। তার আমলে বিরাট অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে দেশের প্রধান দল বিএনপিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, ক্ষমতার হাত বদল হলে বাংলাদেশে প্রতিহিংসামূলক সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। এ ছাড়া ‘ইসলামী চরমপন্থা’ দেশটির জন্য একটি বড় হুমকি।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে রয়েছেন শান্তিতে নোবেল পাওয়া প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যারা ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থন পেয়েছে। এ সরকার আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করছে।
সিরিয়া সম্পর্কে দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, সিরিয়াতে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। গত ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬ লাখ মানুষ। আসাদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তার পতনে সিরিয়া জুড়ে আনন্দের জোয়ার বইছে।
অন্যদিকে আসাদের সমর্থক রাশিয়ার জন্য অপমান বয়ে নিয়ে এসেছে। আসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল ইরান ও রাশিয়া। দেশগুলো আসাদকে টিকিয়ে রাখতে শক্তিশালী যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। শেষমেষ আসাদ পালিয়ে রাশিয়াতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে আসাদের পতনের পর কী হবে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে হায়াত তাহরীর আল শাম নামের সংগঠন। যারা আসাদ সরকার উৎখাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তবে সশস্ত্র এই সংগঠনটি আল কায়েদার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৬ সালে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত হয়। যদিও তারা সক্ষমতার সঙ্গে ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ করেছিল। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে সিরিয়াতে সংগঠনটি একটি ‘ইসলামী স্বৈরাচারী শাসন’ চাপিয়ে দিতে পারে। যদি এমনটা হয় তাহলে দেশটি আবারো বিক্ষিপ্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট।
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
আপনার মতামত জানানঃ