বাংলাদেশে একের পর এক সফরে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে গণতন্ত্র মানবাধিকার রোহিঙ্গা সমস্যাসহ আরো অনেক কিছু। যদিও বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন অন্য এক তত্ত্ব। তবে তা প্রমাণিত নয়। যদিও সম্ভাবনা অনেক।
এরই ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রম পরিস্থিতিসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনায় ঢাকা আসছে উচ্চ পর্যায়ের একাধিক মার্কিন প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশের ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান বিষয়েও আলোচনায় আগ্রহ রয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদের।
এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের দায়িত্বশীল সূত্র। সফরগুলো বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আন্তরিক উভয় পক্ষ।
সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোলাল্ড লু এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ দূত আইলিন লাউবাচারের ব্যাক টু ব্যাক সফরে সেই বার্তাই স্পষ্ট হয়েছে। তাদের সফরের পরপরই ঢাকা আসার কথা ছিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেরেক শোলের।
লু ঢাকায় থাকতেই তার সফর পিছিয়ে দেয়া হয়। তখন বলা হয়, হয়তো খানিকটা সময় নিতেই সফরটি পেছানো হয়েছে। সেই সফরই এখন বাস্তবায়ন হচ্ছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, শোলে ঢাকা আসার আগে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমবিষয়ক উপসহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারা ম্যাকডোনাল্ড বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার সফরের দিনক্ষণ নিশ্চিত হয়নি।
তবে এটা নিশ্চিত যে, ডেরেক শোলের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের একাধিক সদস্য আগামী সপ্তাহে ঢাকা পৌঁছাবেন। তারা প্রথম দু’দিন কক্সবাজারে কাটাবেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিনে দেখবেন এবং ঢাকায় ফিরে শোলের কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত হবেন।
কর্মকর্তারা বলেন, খাতওয়ারি আইলিন লাউবাচার, ডোনাল্ড লুর আলোচনা যেখানে থেমেছে ডেরেক শোলের আলোচনা সেখান থেকেই শুরু হবে।
মূলত শোলে তার জুনিয়র প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সফরের ফলোআপ করবেন এবং বাংলাদেশ বিষয়ক একটি সমন্বিত রিপোর্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেনের কাছে তুলে ধরবেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি তার ঢাকা পৌঁছানোর কথা।
সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহী তিনি। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘোষণা মতে, ডেরেক শোলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ ডিপ্লোমেটিক অ্যাসাইনমেন্ট প্রাপ্ত এবং তিনি সরাসরি তার কাছেই রিপোর্ট করেন।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টম্বরে শোলে পাকিস্তান সফর করেন। সেই সফরে আলোচিত ছিল সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাবেদ বাজওয়ার সঙ্গে তার বৈঠক। সেই বৈঠকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হয়। স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগদানের আগে শোলে হোয়াইট হাউস এবং ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্সে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেগুনবাগিচা জানিয়েছে, উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের পর এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে মন্ত্রী মোমেনের বৈঠক আর পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে রাজনীতিবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের বৈঠকের চেষ্টা চলছে।
এখানে উল্লেখ্য বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সফরের সংখ্যা বেশি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গেছে। আর এর কারণ হিসেবে কিছু বিশেষজ্ঞ শুধু দুই দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ও উন্নয়নের পাশাপাশি ইঙ্গিত করছে নতুন এক প্রসঙ্গকে। আর তা হল মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন বাংলাদেশের।
সম্প্রতিই ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে এসেছেন। তবে এটা দেখানো হচ্ছে যে তার বাংলাদেশে আসার অন্যতম উদ্দেশ্য এখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। যদিও নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, লুর বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য ভিন্ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাথে বৈঠক সত্ত্বেও লুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছিল সালমান এফ রহমানের সাথে। এর আগে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকর্তা। আর সেটি ছিল ভারতের সাথে। তাই এই অতি সহজ সমীকরণ থেকে আরও অতি সহজ যে সমাধান আমরা পাই তা হল, উপরে উল্লেখিত লজিস্টিক সাপোর্টের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের এই ছোটাছুটি।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের উপরে বসনিয়ার মতো নো ফ্লাইং জোন ঘোষণা করতে চলেছে, যদি না তারা দেশটিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি সেনা অভিযান না চালায়। তবে মিয়ানমারে নো ফ্লাইং জোন আরোপ করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের লজিস্টিক সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন হবে। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জন্যই এত বেশি বাংলাদেশ সফরে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। আসন্ন সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি যথাযথ কারণেই তা এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না। হতে পারে গণমাধ্যমে যেভাবে উল্লেখ করা হচ্ছে, সফরটি আসলে সে রকমই। আবার হতে পারে সফরটির গোপন কোন উদ্দেশ্য আছে।
এসডব্লিউএসএস/১৭৫৫
আপনার মতামত জানানঃ