গত ২৬ এপ্রিল বান্দরবানের “লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড”-এর দেয়া আগুনে লামা উপজেলার ৩’টি দুর্গম ম্রো পাড়ার প্রায় ৪০’টি পরিবার যথেষ্ট খাদ্য এবং খাবার পানির সংকটে রয়েছে। পাড়াগুলো হলো দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া ও রেংয়ান ম্রো পাড়া। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেয়া আগুনে তিনটি পাড়ার মোট একশ একরের অধিক বিভিন্ন ফলজ বাগান পুড়ে ছাই হয়ে যায় স্থানীয় আদিবাসীদের। যে বাগানের উপর নির্ভরশীল ছিলো তাদের বাঁচা-মরার অস্তিত্ব। বর্তমানে লামার ৩’টি পাড়ার স্থানীয় আদিবাসীরা খাদ্যভাবে বনের লতাপাতা খেয়ে মানবেতর জীবনের সর্বোচ্চ উপত্যকায় বসে হতাশার দিন গুনছে।
ঘরে খাবার নেই। শিশু থেকে বৃদ্ধ বনের পাহাড়ি লতাপাতা সিদ্ধ করে খেয়ে কোনমতে চোখে মূখে অসহায়ত্বের ছাপ নিয়ে জীবন ধারণ করছে। লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেওয়া আগুনে জীবন-জীবিকা নির্ভর সমস্ত ফলজ বাগান পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত তারা পাননি কোন সাহায্য।
২০১৯ সালে জুমের জায়গা দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীরা প্রতিবাদ করলে রাবার কোম্পানির লোকেরা সেনাবাহিনীর যোগসাজশে পাড়ার ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। যার ফলে ভয় আর আতংকে পাড়াবাসীর প্রতিবাদ সেখানে সমাপ্তি হয়। তথসময়ে রাবার কোম্পানির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে যায়। এবং যারা রয়েছে তাদেরও রাবার কোম্পানি কতৃক বিভিন্ন অত্যাচারের মূখে নিরবতা পালন করে থাকতে হয়েছে। এখনো সেই অত্যাচারের শেষ নেই।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেয়া আগুনে কেবল পুড়ে ছাই হয়ে যায়নি স্থানীয় আদিবাসীদের ফলজ বাগান। একই সাথে ধ্বংস হয়ে গেছে পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতিও। ধ্বংস হয়ে গেছে ঝিরি-ঝর্না। যার ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানির সংকট। স্থানীয় আদিবাসীদের খাদ্যভাবের সংকটময় পরিস্থিতি সরকারের কাছে এখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি। তাদের মানবেতর জীবন-যাপনের আর্ত্মনাদ এখনো সরকারের কানে পৌঁছেনি!!!
গত ২০ মার্চ বান্দরবান জেলা প্রশাসনের সামনে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলো স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর আদিবাসীরা রাবার কোম্পানির হিংস্র দানবীয় থাবা থেকে নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচাতে। এমনকি পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের পায়েও শরণাপন্ন হয়েছিলো কিন্তু দুঃখের বিষয় অসহায় ম্রো আদিবাসীদের অস্তিত্ব হারানোর আর্ত্মনাদ কেউ শুনতে পায়নি। কেউ তাদের সাহায্য করেনি!!!
রাবার কোম্পানি স্থানীয় ম্রো আদিবাসীদের প্রায় ৩০০ একর জমি দখল করে নিয়েছে। দখলদারিদের বিরুদ্ধে ভূমিপুত্র ম্রোদের প্রতিবাদ করারও কোন পথ নেই। কারণ প্রতিবাদ করলে কোম্পানির দানবেরা তাদের উপর মামলা ঝুলিয়ে দেয়। মামলা আর সেনাবাহিনীর বর্বরতার ভয়ে তারা এখন নিরবতা পালন করতে বাধ্য। অসহায়ত্ব আর দানবীয় আতংকে স্থানীয় ম্রো আদিবাসীরা এখন অস্তিত্ব সংকটের দ্বারপ্রান্তে। বর্তমানেও লামার ক্ষতিগ্রস্থ ৩’টি পাড়ার ম্রো আদিবাসীরা খাদ্যভাবের সাথে ভয় আর আতংকে দিন পার করছে। রাবার কোম্পানির লুটেরা তাদের পাহাড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। বাজারে যেতে পারছে না। কোনমতে যেতে পারলেও আয়ের উৎস কোম্পানির লুটেরা ধ্বংস করে দেয়ায় অর্থের অভাবে কিছুই করতে পারছে না।
রাবার কোম্পানির দানবীয় থাবায় স্বাধীন বাংলাদেশের বুকে একটা জাতির অস্তিত্ব উৎখাত হচ্ছে অথচ সরকারের নেই কোন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। স্বাধীন দেশের মাটিতে দানবেরা করছে রাজত্ব। এটা রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রীয় সরকারের জন্য খুবই লজ্জার নয় কি? আদিবাসীরাও স্বাধীন দেশের নাগরিক। কিন্তু নাগরিক হিসেবে তাদের কোন স্বাধীনতার প্রাপ্য নেই। আছে শধু রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন-নির্যাতন আর বৈষম্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা এভাবেই কোননা কোনভাবে প্রতিনিয়ত অত্যাচারের সম্মুখীন হচ্ছে। নিজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের সম্মূখীন হচ্ছে। স্বাধীন সার্বভৌমত্বের অধিকারী একটা রাষ্ট্রে আদিবাসীদের অবস্থান থাকলেও স্বাধীনতার স্বাধ তারা এখনো পাইনি। বরাবরের মত তারা নির্যাতীত-নিপীড়িত কখনো সেনাবাহিনী কতৃক আবার কখনো সত্তর-আশির দশকে আদিবাসীদের জায়গা জমি দখল করে বসতি স্থাপন করা সেটেলার বাঙালী কতৃক। আর কত চলবে এই নিপীড়ন? এই নিপীড়ন-নির্যাতনের শেষ কোথায়?
আপনার মতামত জানানঃ