সম্প্রতি দেশে কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এসব অপরাধ ও অপকর্মের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণ ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, এমনকি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মতো ঘৃণ্য অপরাধও আছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বরগুনার বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার(২৯ মার্চ) সকালে বরগুনা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক এর মাধ্যমে বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার বরাবর বামনার ওসি বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন শাহানা বেগম নামের নারী।
মিথ্যা অভিযোগ এনে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পরে ৯৯৯-এ কল করায় ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ওসির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুনরায় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছেন এই ওসি।
অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশিরুল আলম বরগুনার বামনা থানায় দায়িত্বরত আছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বামনা উপজেলার খোলপটুয়া বাজারে রাসেল নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর ইলেকট্রিক পণ্যের দোকান রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ওসি বশিরুল আলম ইলেকট্রিক তার কেনেন রাসেলের দোকান থেকে। কিছুক্ষণ পর নিম্নমানের তার বিক্রির অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী রাসেলকে থানায় ডেকে পাঠান ওসি। পরে স্বজনরা থানায় গেলে ওসি বলেন, রাসেল নিম্নমানের তার বিক্রি করছে। এ সময় পরিবারের কাছে কারাগারে পাঠানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। উপায় না পেয়ে স্বজনরা ২০ হাজার টাকা দিয়ে রাসেলকে ছাড়িয়ে নেন।
একই দিন সন্ধ্যায় রাসেল মল্লিক জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে ২০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানান। এতে ওসি বশিরুল আলম ঘুষের ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দেন। এরপর স্থানীয় কয়েকজন নারীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে হয়রানি করেন রাসেল ও তার পরিবারকে। এসব মামলায় ভয় দেখিয়ে এবার এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে রাসেলের বোন সাহানা বেগম বলেন, দুই নম্বর তার বিক্রির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ওসি বশিরুল আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়। সে আমাদের কাছে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলে আমরা ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাই।
মিথ্যা অভিযোগ এনে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে পরে ৯৯৯-এ কল করায় ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই ওসির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুনরায় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছেন এই ওসি।
কিন্তু আমার ভাই ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি জানালে ওসি আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে দেন। এরপর থেকেই আমরা নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হচ্ছি। এসব মামলায় তিনি আবারও আমাদের কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বাধ্য হয়ে আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি।
ব্যবসায়ী রাসেল মল্লিক বলেন, আমি দোকানে কোনো ভেজাল বা দুই নম্বর পণ্য রাখি না। ওসি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যান। পরে আমার বোন ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনেন। ওই দিনই আমি ৯৯৯-এ কল করে পুরো ঘটনা বলি। পরদিন ওসি আমার দুলাভাইয়ের কাছে ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
রাসেল বলেন, এরপর স্থানীয় একটি চক্রের নারীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগ দেওয়ান। এরপর থানায় ডেকে নিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন ওসি। এই টাকা না দিলে আমাকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন তিনি। নিরুপায় হয়ে ডিআইজি ও পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দিই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যা,এরকম কিছুই হয়নি। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কেউ আমাকে বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে।
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, এব্যাপারে আমি একটি অভিযোগ পত্র পেয়েছি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পাথরঘাটা সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন। তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পেলে ওসি বশিরুল আলমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলশ্রুতিতে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনের খড়্গ চালানোর আগে পুলিশের ওপর চালানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, আগে পুলিশকে অপরাধমুক্তের চরিত্র অর্জন করতে হবে। নইলে সন্ত্রাসীদের নিকট পুলিশের যে ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে, এতে পুলিশ আর সন্তাসীদের মধ্যকার তফাৎ ঘুচে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৪
আপনার মতামত জানানঃ