বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচকে আরও দুই ধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের শক্তিশালী ১১৬ পাসপোর্টের তালিকায় ১০৮তম অবস্থানে জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট।
বিশ্বে পাসপোর্টের মান নির্ধারণকারী সূচক হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স-২০২১ প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর)। কোন দেশের পাসপোর্টে কতটি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ করা যায়, এর ওপর ভিত্তি করে এ সূচকটি তৈরি করা হয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে এ বিষয়ে গবেষণা ও সূচক প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা দ্য হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস।
এই সূচকে গত জুলাইয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিল ১০৬তম অবস্থানে। এবারের তালিকায় মোট ১১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা ১০৮তম। এবার বাংলাদেশের সঙ্গী কসোভো ও লিবিয়া। দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশ বাংলাদেশের চেয়ে নিচে অবস্থান করছে। এর মধ্যে নেপালের অবস্থান ১১০তম, পাকিস্তানের ১১৩তম এবং ১১৬তম তথা তালিকায় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।
গ্লোবাল সিটিজেনশিপ এবং রেসিডেন্সি পরামর্শক লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি এন্ড পার্টনার্স প্রতি বছর চারবার পাসপোর্ট সূচক প্রকাশ করে। ভিসা ছাড়া কোন পাসপোর্ট দিয়ে কতটি দেশে ভ্রমণ করা যায় তার ওপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে সংগৃহীত আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ভ্রমণ তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সূচক তৈরি করা হয়। জুলাইয়ে তাদের পাসপোর্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৬তম। তার আগে এপ্রিলে ছিল ১০০তম অবস্থানে।
এবারের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে জাপান। জাপানের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া ১৯২টি দেশে ভ্রমণ করা যায়। তালিকায় থাকা জাপানের পরের চারটি দেশ হলো সিঙ্গাপুর, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিনল্যান্ড। সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া ১৯২টি দেশে, জার্মানি ও দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্ট দিয়ে ১৯০টি দেশে ও ফিনল্যান্ডের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া ১৮টি দেশে ভ্রমণ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অবস্থান ৭ নম্বরে। তাদের সঙ্গী চেক রিপাবলিক, গ্রীস, মাল্টা এবং নরওয়ে। এসব দেশের পাসপোর্ট দিয়ে আগাম ভিসা ছাড়া ১৮৫টি দেশে ভ্রমণ করা যায়। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা রয়েছে তালিকার অষ্টম অবস্থানে।
প্রকাশিত সূচকে বলা হয়, ভিসা ছাড়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিশ্বের ২২৭টি দেশের ভেতর কেবল ৪০টিতে ভ্রমণ করা সম্ভব। এর মধ্যে আফ্রিকার ১৫টি দেশ, ওশেনিয়ার (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ব্যতীত) ৫টি, এশিয়ার ৬টি এবং দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশে যাওয়া যায়।
তবে ইউরোপের কোনো দেশেই আগে থেকে ভিসা না করে যেতে পারবেন না বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা।
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। ৬৬তম শক্তিশালী অবস্থানে থাকা দেশটির নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই ৮৭টি দেশে ভ্রমণের সুবিধা পান। প্রতিবেশী দেশ ভারত ৯০ তম, ভুটান ৯৬ তম, শ্রীলংকা ১০৭তম অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া নেপাল ও পাকিস্তান ১১০ ও ১১৩তম স্থানে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি পাসপোর্টকে একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলক হিসেবে দেখা হয় এবং সে হিসেবেই একটি পাসপোর্টের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একটি দেশের ভাবমূর্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রার মানের মতো সব ধরণের বিষয় নিয়ে পাসপোর্টের মূল্যায়ন করা হয়। এই বিষয়গুলোতে কোন ধরণের গুণগত পরিবর্তন না আসলে পাসপোর্টের মূল্যায়নে কোন প্রভাব পড়ার সুযোগ কম বলে জানান তারা।
তারা বলেন, গণতন্ত্র, জনগণের দক্ষতা ও সক্ষমতা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, কাজের অবাধ সুযোগ— বাইরের দেশের দৃষ্টিতে এগুলোতে কোন পরিবর্তন না এলে তাহলে নতুন ভ্যালুয়েশন যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ