বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের মূল্যায়ন সূচক তালিকায় বাংলাদেশের পাসপোর্টের ১ ধাপ অবনমন ঘটেছে। ১১২টি স্থানের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান এখন ১০৪তম। জানুয়ারিতে এটি ছিল ১০৩তম অবস্থানে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের মূল্যায়ন সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা হ্যানলি পাসপোর্ট ইনডেক্স-২০২২ এর দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) ভ্রমণ তথ্যভাণ্ডারের সহযোগিতা নিয়ে এ সূচক তৈরি করে হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। দেশওয়ারি স্কোর দেওয়া রয়েছে এই সূচকে। একটি দেশ আগে থেকে ভিসা ছাড়াই অর্থাৎ আগমনী ভিসা নিয়ে বিশ্বের কতটি দেশে যেতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করে এই স্কোর।
কোন দেশের পাসপোর্ট দিয়ে আগে থেকে ভিসা নেওয়া ছাড়াই কতগুলো দেশে যাওয়া যায়, সে তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স। এ কাজে তারা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) কাছ থেকে। এ প্রান্তিকের পাসপোর্ট সূচকের শীর্ষ স্থানটি যৌথভাবে দখলে রেখেছে জাপান ও সিঙ্গাপুর। মোট ১৯২টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ রয়েছে দেশ দুটির।
র্যাংকিংয়ে ১০৪ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ থেকে আগে ভিসা নেওয়া ছাড়া ৪০টি দেশে যাওয়া যায়। র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই কাতারে রয়েছে কসোভো ও লিবিয়া। অন্যদিকে এই তিন দেশের চেয়ে এক ঘর এগিয়ে রয়েছে সুদান।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে পাসপোর্ট সূচকেও। এখন ইউক্রেন থেকে ১৪৩টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসায় যাওয়া যায়। সূচকে জানুয়ারির তুলনায় এক ধাপ এগিয়েছে দেশটি। এবারের তালিকায় ইউক্রেনের র্যাংকিং ৩৪।
অন্যদিকে রাশিয়া গতবার ছিল র্যাংকিংয়ের ৪৬তম স্থানে, কিন্তু এবার কয়েক ধাপ নেমে ৪৯-এ। সাম্প্রতিকতম সূচক অনুসারে, রাশিয়ার পাসপোর্টধারীরা আগে থেকে ভিসা নেওয়ার ঝামেলা ছাড়া ১১৭টি গন্তব্যে যেতে পারেন।
এবারের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয় পাসপোর্টের অবস্থান এখন ৮৫তম। এই দেশের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ৫৯টি দেশে যেতে পারেন।
২০০৬ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৬৮তম। এরপর থেকেই এটি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে।
সূচক অনুসারে, সামরিক শাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারের পাসপোর্ট এখনও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। এই দেশটির পাসপোর্টের অবস্থান এখন ৯৮তম। ভুটান আছে ৯১তম স্থানে। আর শ্রীলঙ্কার অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ উপরে। অর্থাৎ ১০৩তম।
এদিকে নেপাল, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে। সূচকে এই দেশগুলোর পাসপোর্টের অবস্থান যথাক্রমে ১০৬, ১০৯ ও ১১২তম।
২০০৬ সালে বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৬৮তম। এরপর থেকেই এটি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে হেনলি বলেছে, তারা ১৯৯টি আলাদা পাসপোর্ট এবং ২২৭টি গন্তব্য নিয়ে কাজ করে। হেনলির কাছে গত ১৭ বছরের তথ্য মজুদ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি পাসপোর্টকে একটি দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রতিফলক হিসেবে দেখা হয় এবং সে হিসেবেই একটি পাসপোর্টের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একটি দেশের ভাবমূর্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রার মানের মতো সব ধরণের বিষয় নিয়ে পাসপোর্টের মূল্যায়ন করা হয়। এই বিষয়গুলোতে কোন ধরণের গুণগত পরিবর্তন না আসলে পাসপোর্টের মূল্যায়নে কোন প্রভাব পড়ার সুযোগ কম বলে জানান তারা।
তারা বলেন, গণতন্ত্র, জনগণের দক্ষতা ও সক্ষমতা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, কাজের অবাধ সুযোগ— বাইরের দেশের দৃষ্টিতে এগুলোতে কোন পরিবর্তন না এলে তাহলে নতুন ভ্যালুয়েশন যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ