চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় বহু শতাব্দী ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। পাহাড়ের চূড়ায় শিবমন্দিরকে ঘিরে প্রতিবছর হাজারো ভক্ত আসেন এখানে। সম্প্রতি এই তীর্থস্থানের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হয় একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে, যা মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ঢাকার জুতা ব্যবসায়ী এম এম সাইফুল ইসলাম ১৫ আগস্ট পাহাড় ভ্রমণের পর ফেসবুকে লেখেন, দেশে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি হলেও চন্দ্রনাথ পাহাড়ে কোনো মসজিদ নেই। তিনি মনে করেন, মুসলিম পর্যটকদের জন্য নামাজের জায়গা থাকা উচিত। এর পরের দিন তিনি আরও একটি পোস্টে উল্লেখ করেন, “আজ না হোক কাল, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে নামাজের জায়গা হবেই।” এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ সহমত জানিয়ে অর্থ সহায়তার আশ্বাস দেন, আবার স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনা আরও বিতর্কিত হয়ে ওঠে যখন সাইফুল ইসলাম হেফাজতে ইসলামের নেতা হারুন ইজহারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেই ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা প্রায় নিশ্চিত। তবে পরে হারুন ইজহার ব্যাখ্যা দেন যে তীর্থস্থানে নয়, বরং পর্যটকদের সুবিধার্থে কাছাকাছি কোথাও একটি ইবাদতখানা হতে পারে।
বিতর্ক তীব্র আকার ধারণ করলে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম জানান, চন্দ্রনাথ মন্দির এলাকায় মসজিদ নির্মাণের কোনো অনুমতি প্রশাসন দেয়নি এবং এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত পোস্ট থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তি। তিনি আশ্বস্ত করেন যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে পাহাড়ের স্বকীয়তা বজায় থাকবে।
স্থানীয় স্রাইন কমিটি স্পষ্ট করে জানায়, পাহাড়ের পুরো এলাকা তাদের মালিকানাধীন এবং এটি একটি ঐতিহাসিক তীর্থস্থান। তাই নতুন কোনো ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ এখানে অগ্রহণযোগ্য। তারা সরকারের সঙ্গে বসে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত সীমিত করার পরিকল্পনার কথাও জানায়।
ধর্মীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, যেখানে নিয়মিত মুসল্লি নেই, সেখানে মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে আহ্বান জানান, যেন একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয়।
আপনার মতামত জানানঃ