তালিবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরপরই সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল হক হাম্মাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ইতিসাহ সৃষ্টি করেন আফগানিস্তানের নারী সাংবাদিক বেহেস্তা আরগান্দ। তার নেওয়া তালিবানের একজন সিনিয়র প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যম টোলোনিউজের ওই সাংবাদিক প্রথম নারী সাংবাদিক হিসেবে কোনো তালিবান নেতার সাক্ষাৎকার নেন। দু’দিন পরে আরগান্দ সাক্ষাৎকার নেন মালালা ইউসুফজাইয়ের, যাকে এই তালিবানরাই হত্যার চেষ্টা করেছিল কয়েক বছর আগে।আফগানিস্তানের কোনো টেলিভিশনকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা। পরপর দুটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের পর হঠাৎ দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন আরগান্দ।
তিনি বলেছেন, আমি দেশ ত্যাগ করছি কারণ লক্ষ লক্ষ মানুষের মতো আমিও তালিবানকে ভয় করি।
বেহেস্তার সঙ্গে তার পরিবারও রয়েছে। তবে আগামী দিনে দেশে ফিরতে পারবেন, সেই আশাতেই রয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসেই ইতিহাস গড়েছিলেন আফগানিস্তানের এই নারী সাংবাদিক। তালিবানের এক শীর্ষনেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে তালিবান শাসনে নারীদের অধিকার কতটা সুরক্ষিত থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বেহেস্তা।
সংবাদমাধ্যমকে বেহেস্তা বলেন, তালিবান ওই শীর্ষনেতার সাক্ষাৎকার নেওয়ার দু’দিন পরই মালালা ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকার নিই। কিন্তু তার পরে বাকিদের মতো আমিও ভয়ে দেশ ছেড়েছি। আমার পরিচিত বহু সাংবাদিক দেশ ছেড়েছেন। আমাদের সামনে এখন দু’টি সমস্যা। আফগানদের দেশ ছেড়ে বার করে আনা ও সেই সঙ্গে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো।
আফগান বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়ী ও টোলোনিউজের স্বত্বাধিকারী সাদ মোহসেনি সিএনএনকে বলেন, ‘আফগানিস্তানের খ্যাতনামা সাংবাদিকদের বেশির ভাগই দেশ ছেড়েছেন। তাদের জায়গায় অন্যদের নিয়োগ দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যেসব সাংবাদিক দেশে থাকতে অনিরাপদ বোধ করছেন, তাদের দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করা এবং টোলোনিউজের কার্যক্রম চলমান রাখা।’
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেন আরগান্দ। বিভিন্ন বার্তা সংস্থা ও রেডিও স্টেশনে কাজ করার পর চলতি বছরে উপস্থাপক হিসেবে টোলোনিউজে যোগ দেন তিনি।
আরগান্দ বলেন, ‘টোলোনিউজে দেড় মাসের বেশি কাজ করি আমি। এরপরই তালিবান দেশের ক্ষমতা দখল করে।’
আরগান্দের তালিবানের নেতার সাক্ষাৎকারের বিষয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে এক কলামে মোহসেনি বলেছিলেন, ‘নারী এক উপস্থাপকের মুখোমুখি বসে টেলিভিশন স্টুডিওতে লাইভে এই প্রথম তালিবানের কোনো প্রতিনিধি সাক্ষাৎকার দিলেন। এটি আফগানিস্তানের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বের কাছে তালিবান নিজেদের মধ্যমপন্থি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে।’
এ বিষয়ে আরগান্দ বলেন যে, সাক্ষাৎকারটি কঠিন হলেও তিনি সেটি করেছিলেন “আফগান নারীদের জন্য।”
তিনি বলেন, আমি নিজেকে বলেছিলাম, ‘আমাদের মধ্যে কাউকে না কাউকে অবশ্যই শুরু করতে হবে … যদি আমরা আমাদের বাড়িতে থাকি বা অফিসে না যাই, তারা বলবে যে নারীরা কাজ করতে চায় না,’ তাই আমি কাজ শুরু করতে নিজেকে মানিয়ে নিলাম। আমি সেই তালিবান সদস্যকে বলেছিলাম, ‘আমরা আমাদের অধিকার চাই, আমরা কাজ করতে চাই। এটি আমাদের অধিকার।'”
এদিকে দেশটিতে বর্তমানে প্রতিদিনই সংবাদ মাধ্যমকে লক্ষ্য করে তালিবানদের ভয় দেখানোর নতুন বিবরণ উঠে আসছে।
ইউসুফজাইয়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার দুই দিন পর, আরগান্দ একজন অ্যাক্টিভিস্টের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। এরপর মঙ্গলবার, তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের সাথে তিনি কাতার বিমান বাহিনীর একটি উচ্ছেদ বিমানে চড়ে দেশ ত্যাগ করেন।
তবে, আরগান্দ বলেছেন যে দেশে ফেরার আশা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, তালেবানরা যদি তাদের প্রতিশ্রুতি মত কাজ করে ও পরিস্থিতির উন্নতি হয় এবং যদি আমি বুঝতে পারি যে দেশে থাকা নিরাপদ তাহলে আমি আফগানিস্তানে ফিরে যাব এবং দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।
নারী সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে তালিবান নেতা হাম্মাদ সম্মত হওয়ায় অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার বোধহয় নারী অধিকারের ইস্যুতে নমনীয় হবে তালিবান। কিন্তু আরগান্দের প্রস্থানে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৬
আপনার মতামত জানানঃ