
জমাট বাঁধা বরফ খণ্ড সরে যাওয়ায় গত মাসে গ্রিনল্যান্ড উপকূলে ক্ষুদ্র একটি ভূখণ্ডের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। এটি পৃথিবীর সর্ব উত্তরের ভূখণ্ড বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
দ্বীপটি আবিষ্কারের ঘটনাকে বিস্ময়কর বলে আখ্যায়িত করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর্কটিক স্টেশন রিসার্চ ফ্যাসিলিটির প্রধান ও মেরু অনুসন্ধানকারী মর্টেন রাশ বলেন, ‘নতুন দ্বীপ আবিষ্কার করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিছু নমুনা সংগ্রহ করছিলাম আমরা। সেসময়ই বরফখণ্ড সরে যেয়ে এই দ্বীপটি নজরে আসে আমাদের। দ্বীপটি মূলত একটি ডেনমার্ক-সুইস গবেষণা অভিযানের সময় আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা আমি সমন্বয় করছিলাম।’
সূত্র মতে, আর্কটিক দেশগুলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক এবং নরওয়ের মধ্যে উত্তর মেরু নিয়ন্ত্রণের জন্য উত্তর দিকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার (৪৫৫ মাইল) এবং আশেপাশের সমুদ্রতল, মাছ ধরার অধিকার এবং শিপিং রুটগুলোর উন্মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বরফ গলে এই ভূখণ্ডটি ভেসে উঠেছে।
বিজ্ঞানীরা শুরুতে ভেবেছিলেন তারা বুঝি ১৯৭৮ সালে ডেনমার্কের জরিপদলের আবিষ্কৃত উডাক দ্বীপে পৌঁছেছেন। কিন্তু মাপজোখ করে পরে নিশ্চিত হন যে, তারা উত্তর-পশ্চিম থেকে ৭৮০ মিটার দূরের অন্য আরেকটি দ্বীপে উপস্থিত হয়েছেন।
গত বছরের জুলাইয়ে গবেষকরা ১৯৭৮ সাল থেকে সর্বসাধারণের আগ্রহের কেন্দবিন্দু উডাক আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য যান। গ্রিনল্যান্ডের এই বিশাল স্বায়ত্তশাসিত আর্কটিক অঞ্চলটি ডেনমার্কের অন্তর্গত।
অবস্থান জানতে মাপজোখ করলে, ড্যানিশ কর্মকর্তারা দেখেন যে তারা ৮০০ মিটার উত্তরে ৬০ ও ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য-প্রস্থের একটি দ্বীপে অবস্থান করছেন। যেটা উত্তর মেরুর সবচেয়ে কাছের ভূমি বলে জানান তারা।
সমুদ্রপৃষ্ঠের কাঁদা, চলন্ত হিমবাহ বা বিশালাকৃতির বরফখণ্ডের মাটি ও পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি ছোট্ট এই ভূখণ্ডটি। এর সবচেয়ে উঁচু স্থলভাগ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র তিন মিটার উচ্চতায়।
বিজ্ঞানীরা দ্বীপটির নাম রাখতে চাচ্ছেন ‘কিকার্তাক আভাননার্লেক’— যার অর্থ গ্রিনল্যান্ডের ‘সবচেয়ে উত্তরের দ্বীপ’।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিনল্যান্ডের আর্কটিক স্টেশনের বৈজ্ঞানিক দলের প্রধান মর্টেন রাশ বলেন, তারা মূলত সর্ব উত্তরের দ্বীপ বলে পরিচিতি উডাক আইল্যান্ড পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল অতি বিরূপ পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া নতুন প্রজাতির অনুসন্ধান।
গবেষকদলের সবাই উডাকে পৌঁছাতে পেরেছেন ভেবেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল বলে জানান সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী ক্রিস্টিন লেস্টার। উল্লেখ্য যে, লেস্টার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এই গবেষণাটি চলছিল।
ক্রিস্টিন লেস্টার বলেন, ‘ঘটনাটি অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অতীতে আবিষ্কারকরা যেমন একটা ভূখণ্ডে পৌঁছে ভাবতেন যে, তারা বুঝি কোনো পরিচিত ভূখণ্ডে পৌঁছেছেন। কিন্তু পরে দেখা যেত তারা আসলে নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার করে ফেলেছেন। এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের ভূখণ্ড খুঁজতে কয়েক দশক ধরেই একাধিক অভিযান চলছে। এর আগে ২০০৭ সালে উত্তর মেরুর প্রখ্যাত অভিযাত্রী ডেনিস স্মিথ নতুন এই দ্বীপের কাছাকাছি আরেকটি দ্বীপ আবিষ্কার করেছিলেন।
তবে গবেষকরা এও বলছেন যে, বরফখণ্ড সরে গিয়ে উন্মুক্ত হওয়া নতুন এই দ্বীপ আবিষ্কারের সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে গ্রিনল্যান্ডে হাজার বছর ধরে জমা হওয়া বরফের চাই সংকুচিত হতে শুরু করেছে।
তবে নতুন আবিষ্কৃত এই ভূখণ্ডটি দ্বীপ না পাড় তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এটি সহসাই অবলুপ্ত হবে কি না তাও নিশ্চিত নন তারা। দ্বীপ হতে গেলে সেই ভূখণ্ডটিকে সর্বোচ্চ জোয়ারের সময়ও সাগরে মাথা উঁচু করে টিকে থাকতে হবে। অর্থাৎ, ডুবে গেলে চলবে না।
নতুন এই ভূখণ্ড সেই শর্ত আপাতত পূরণ করলেও এটি ফের তলিয়ে যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। গবেষকদের মতে, এমন ছোট ছোট ভূখণ্ড প্রায়ই ভেসে উঠে, আবার ডুবেও যায়।
পাশাপাশি নতুন আবিষ্কৃত এই দ্বীপটি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের ভূখণ্ড কি না— সে ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত উপসংহার টানছেন না বিজ্ঞানীরা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ