করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই ভারতের মধ্যপ্রদেশের প্রায় ৩ হাজার জুনিয়র চিকিৎসক পদত্যাগ করেছেন। করোনা আক্রান্ত হলে নিজেরসহ পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া, বৃত্তি বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট ডাকেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের চিকিৎসকরা। এদিকে রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা স্পুতনিক-ভি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের প্রাথমিক অনুমতি পেয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।
৩ হাজার চিকিৎসকের পদত্যাগ
বৃহস্পতিবার ভারতের মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্ট জানায়, চিকিৎসকদের এই ধর্মঘট অবৈধ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। হাইকোর্টের এমন ঘোষণায় প্রতিবাদ জানান নবীন চিকিৎসকদের সংগঠন-মধ্যপ্রদেশ জুনিয়র ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন। এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্যের ছয়টি হাসপাতালের প্রায় তিন হাজার জুনিয়র চিকিৎসক একযোগে পদত্যাগ করেন।
আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে নিজেদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কিতা ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, ‘সরকার এখনও আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। কেবল আশ্বাস দিয়েছে মাত্র। তাই এখনই আমরা ধর্মঘট তুলছি না। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের ডাক্তারদের এই পদত্যাগের ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন।
এদিকে পাঞ্জাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের টিকা দেয়ার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোয় উচ্চমূল্যে টিকা বিক্রি হচ্ছে- রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের এমন অভিযোগের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
স্পুটনিক ভি উৎপাদনের অনুমতি পেল সেরাম
সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদর পুনাওয়ালাকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে টিকা উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে সেরাম। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেরাম পুনের প্লান্টে এই টিকার উৎপাদন শুরু করবে।
এনডিটিভিকে সেরামের একজন মুখপাত্র বলেন, স্পুটনিক ভি-র জন্য প্রাথমিক অনুমোদন পেলেও উৎপাদনে যেতে আরও কয়েক মাস লাগবে। এর আগে গত ১৪ মে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি ডা রেড্ডি ফার্মাসিটিউক্যালস-এর পরীক্ষাগারে স্পুটনিক-ভির প্রথম ডোজের পরীক্ষা হয়।
সেরাম বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমনের বিপরীতে দুই ডোজের টিকা স্পুটনিক ভি-র কার্যকারিতা প্রায় ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ। রাশিয়ার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি পাওয়ার পর টিকাটির নামকরণ করা হয় সোভিয়েত স্যাটেলাইটের নামে।
অনুমোদনের পর গত বছর অগাস্টে তারা বিষদ পরিসরে স্পুটনিক-ভির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়।
নানা নিরীক্ষার পর দ্য লেনসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই ডোজের এই টিকা কোভিড সংক্রমনের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর। রাশিয়ান টিকাটি ইতোমধ্যে ৬৫টি দেশে নিবন্ধিত হলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অথবা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুমতি পায়নি এখনও।
ডা. রেড্ডি ফার্মাসিটিউক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক সাপরা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, রাশিয়ার এক ডোজের টিকা স্পুটনিক লাইটের অনুমতি পেতে তারা সরকার ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কথা বলবেন এ মাসে।
এক ডোজের স্পুটনিক লাইট কোভিড সংক্রমনের বিপরীতে ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকর।
দীপক সাপরা বলেন, স্পুটনিক লাইট অনুমোদন পাবে কি না তা নির্ভর করছে আমাদের বৈঠকের ওপর। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক এগোবো আমরা। ভারত প্রতি ডোজ স্পুটনিক-ভি টিকা কিনছে ৯৯৫ রূপিতে।
৫৮ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন দৈনিক শনাক্ত
ভারতে ৫৮ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম করোনা শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। তবে এই সময়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১ লাখ ২০ হাজার ৫২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৮০ জন। এর আগে দৈনিক মৃত্যুর হার ৩ হাজারের নিচে নেমে এসেছিল।
ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৯। আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮২ জনে। খবর এনডিটিভির
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এই সংক্রমণের জেরে বাড়ছে মৃত্যুও।
২৪ মে ভারতে দৈনিক করোনায় সংক্রমিত রোগী শনাক্তের সংখ্যা গত ১৪ এপ্রিলের পর প্রথম দুই লাখের নিচে নেমেছিল। এদিন দৈনিক করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাও চার হাজারের নিচে নেমেছিল।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে একদিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ে। গত ৩ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়।
গত ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। ৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড এখন ভারতের দখলে। ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এ রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও ওডিশা।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪২২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ