পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ঘুষ, হয়রানি, নারী নির্যাতন, চাঁদা দাবি বা আদায় ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জীবননাশের হুমকির অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি এক গৃহবধূর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে বেগমগঞ্জ থানার এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। তা না হলে স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করে অস্ত্র ও মাদক মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়েছেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের জিরাতলীর একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক ও স্থানীয় গৃহবধূ আরজু বেগমের কাছে এ টাকা দাবি করেছেন বেগমগঞ্জ থানার এএসআই শাকিদুল ইসলাম। এছাড়া এএসআই শাকিদুল ইসলাম একই বাড়ির আরেক গৃহবধূকে রাতের মধ্যে থানায় দেখা না করলে ভোরে এসে তাকেও গ্রেফতারের হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর গৃহবধূ আরজু বেগম পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় বেগমগঞ্জ থানার শাকিল দারোগা পরিচয়ে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ তার বাড়িতে যান। শাকিল দারোগা তাকে বলেন- পাশের বাড়ির মনা তাকে পাঠিয়েছেন। মনার পাওনা ৪ লাখ টাকা নেয়ার জন্য।
আরজু বেগম তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন কিসের টাকা? মনাকে আসতে বলেন। তখন দারোগা শাকিল হম্বিতম্বি করেন। তাকে থানায় যেতে বলেন।
এরপর ১৫ মার্চ রাত ৯টা ৪৩ মিনিটে আরজু বেগমের মোবাইলে ফোন করে থানায় না যাওয়ায় খুব গালমন্দ করেন। পরে বলেন- তাকে (এএসআই শাকিদুল) এক লাখ টাকা দিলে আর কিছু হবে না। আর না দিলে আরজু ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করে বেঁধে নিয়ে মাদক ও অস্ত্র মামলায় চালান দেবেন।
ওই সময় এএসআই শাকিদুল ফোনে আরজুকে আরও বলেন- একই বাড়ির গৃহবধূ জাহানারাকে রাতের মধ্যে থানায় পাঠাতে। না হলে ভোরে এসে তাকেও ধরে নিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরজু বেগম জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
আরজুর স্বামী আবুল কাশেম জানান, তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ প্রবাসে ছিলেন। বর্তমানে তার এক ছেলে প্রবাসে, আরেক ছেলে উচ্চপদে চাকরি করেন। তিনি আদালতে ও থানায় খবর নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা নাই। তারপরও কারও প্ররোচনায় ওই দারোগা আমাদের হয়রানি করছেন। আমরা পুলিশের উচ্চমহলে যোগাযোগ করলে আমাদের পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিতে বলায় আমার স্ত্রী অভিযোগ দিয়েছেন। এখানে বিচার না পেলে আদালতে যেতে বাধ্য হবেন বলে তিনি জানান।
জানা যায়, এএসআই শাকিদুল নিজেকে এসআই শাকিল পরিচয়ে চন্দ্রগঞ্জ, ফেনাঘাটা, রাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক কারবারিদের সহায়তা করে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি প্রবাসী পরিবারকে টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
এ ব্যাপারে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, তিনি আরজু বেগমের অভিযোগ পেয়েছেন এবং তদন্ত শুরু করেছেন। পুলিশ অন্যায় ও দুর্নীতির ব্যাপার জিরো টলারেন্স।
এ ব্যাপারে এএসআই শাকিদুলের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কত অভিযোগ আসে যায়। এসব তো পান্তা-ইলিশ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি ধরে নিয়ে টাকা দাবি, ক্রসফায়ার ও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ এসেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রায় প্রতিনিয়তই পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে। কিন্তু মানুষ কোথায় অভিযোগ করবেন, সেটা জানা নেই। পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করার জন্য কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে। আছে হটলাইনও। তবে হটলাইনগুলো জরুরি সেবার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা সমীচীন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, আইনের রক্ষক হয়ে যখন একজন পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, একজন অপরাধীর চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া উচিত। অথচ আমাদের দেশে সম্পূর্ণই এর বিপরীত। অপরাধ জগতের ডন হয়েও শাস্তি পায় সাময়িক বরখাস্ত ও পুলিশ লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া।
তারা বলেন, আইনকে ব্যবহার করে তাদের চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্ম একদিকে যেমন পুলিশের জন্য লজ্জার অপরদিকে দেশের জন্যও। সাম্প্রতিককালে পুলিশের এহেন অপকর্মের অভিযোগ সন্ত্রাসীদের চেয়েও বেশি পরিমাণে আসছে। পুলিশের কাছে অনেকটাই জিম্মি হয়ে আছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, কর্মজীবীরা। কিছু হলেই সন্ত্রাসীদের চেয়ে ভয়ানক পদ্ধতিতে নির্যাতন করা হয়। যখন তখন ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে লুটে যাচ্ছে প্রচুর টাকা। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/ডিজে/কেএইচ/২০৫৩
আপনার মতামত জানানঃ