দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ফুলতলী এলাকায় নূরনবী (৩৫) নামে এক যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে একলাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের ফুলতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী যুবক জানায়, সোমবার সন্ধ্যার দিকে বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা ইউনিয়নের ফুলতলী গ্রামে বিজয়নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রশীদ এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টহল দল চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাসী করছিলেন। এ সময় পাশের উপজেলা হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের বাসিন্দা নূরনবী নামক এক যুবককে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে। এক পর্যায়ে তার শরীরে তল্লাসী চালায় পুলিশ।
পরে জুতারতলা সহ সব কিছু তল্লাসী করে কোনো কিছু পায়নি। তবে তল্লাসী চলাকলীন তার সাথে একলাখ টাকা ছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। পরে মহুর্তের মধ্যে তাকে আবার ধাওয়া করে ধরে ইয়াবা আছে বলে তার কাছ থেকে একলাখ টাকা কেড়ে নেয়। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী নূরনবী চিৎকার করলে এলাকার লোকজন এসে জড়ো হয়ে পুলিশকে ঘেরাও করে। এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে তাৎক্ষণিক তার কাছ থেকে পাওয়া কোনো ইয়াবা দেখাতে পারেনি পুলিশ। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমানকে খবর দেয় পুলিশ সদস্যরা। থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে মোটরসাইকেল সহ নূরনবী নামক ওই যুবককে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় ব্যবসায়ী পরিমল সাহা জানান, পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে ঘটনার সাক্ষী হিসেবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তবে তারা আমাকে জব্দ করা ইয়াবা দেখাতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘কি করবো পুলিশতো, তাই স্বাক্ষর দিয়েছি।’
তবে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমানের দাবি, আটক যুবক নূরনবীর কাছ থেকে সিগারেটের প্যাকেটে ২৮ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে। এছাড়া তার কাছে থাকা এক লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আতিক জানান, আটক যুবক মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের মাধবপুর থানায় মাদক মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচলক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাদক চোরাচালান ঠেকাতে আমাদের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবিও কাজ করে, তারা যদি কোনা অন্যায় করে সেটা দেখা তাদের স্ব স্ব বিভাগের দায়িত্ব, আমরা সেটাই আশা করি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে আইন রক্ষাকারীরা আইন ভঙ্গ করলে এক বিশৃঙ্খল তৈরী হয়। আইনের রক্ষক হয়ে যদি তা লঙ্ঘন করেন তবে সেটা অন্যদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তারা বলেন, দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে এতো এতো অভিযোগ আসে যে, সন্ত্রাসীদের চেয়ে পুলিশ নিয়ে ভাববার সময় চলে এসেছে। খুন, ধর্ষণ, মাদক সেবন ও পাচার ইত্যাদি হেন অপকর্ম নেই যা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। আইনের অপব্যবহার করে এসব করে থাকেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আইনের রক্ষক হয়ে যখন একজন পুলিশ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, একজন অপরাধীর চেয়ে এর বেশি শাস্তি দেওয়া উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৩৩
আপনার মতামত জানানঃ