গণধর্ষণ ও ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সোমবার (২১ ডিসেম্বর) ‘ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ নামের একটি সংগঠন এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশে চলতি বছর প্রথম ৯ মাসে ৯৭৫ জন নারী ও ৬২৭ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০৮ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
সংগঠনটি মূলত মানবাধিকার কর্মীদের জাতীয় প্লাটফর্ম। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে।
সংগঠনটি আরো জানায়, গত ৯ মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ নারী এবং ৯ পুরুষ নিহত হয়েছেন।
শিশু নির্যাতন ও হত্যার গত ৯ মাসের পরিসংখ্যানও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ১০৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। এছাড়া ৬২৭ শিশু ধর্ষণ ও ২০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ওই ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ জন নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৭৯ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ জন। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬৮ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও এ দেশের নারী ঘরে-বাইরে সব সম্পর্কে, সব বয়সে, শ্রেণি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে জানিয়ে এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এ সময়কালে দেশে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে তারা উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ১৮০ দিনের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা নিষ্পত্তি করা, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা, এ সংক্রান্ত মামলায় সাক্ষী প্রদান প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করা, উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী-শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা-চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা, সব ধরনের বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতন বিরোধী আইনকে সংশোধন করে সময়োপযোগী করাসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারির চেয়েও ভয়ংকর, নিষ্ঠুর ও বর্বর মহামারি নারী ও শিশুদের ওপর যৌনসহিংসতা, ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বিগত কয়েক বছর ধরে যৌন সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নির্যাতনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি নৃসংসতার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, গণমাধ্যমের সহযোদ্ধারা দেশব্যাপী ধর্ষণ ও সব ধরনের নারী নির্যাতনের সংবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করে সুবিচার প্রাপ্তির পথকে তরান্বিত করবেন।
আপনার মতামত জানানঃ