চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ হলেও মানব জীবনে চাঁদের তাৎপর্য অনেক বেশি। চাঁদ শুধু জোছনা দিয়েই শান্ত নয় বরং জীবনযাত্রার অনেকটাই চাঁদের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু যদি এই চাঁদ না থাকে! মহাশূন্যে ভ্রাম্যমাণ কোনো বড় বস্তুখণ্ড যদি পৃথিবীর পাশ দিয়ে যায়, তাহলে এ রকম অঘটন তো ঘটতেই পারে। হতে পারে সে বস্তু তার আকর্ষণ ক্ষমতা দিয়ে চাঁদকে আমাদের আকাশ থেকে টেনে নিয়ে গেল। তাহলে কী হবে?
সামুদ্রিক বড় ঢেউ সৃষ্টির পিছনে পৃথিবীর উপর চাঁদের অভিকর্ষ কাজ করে। এই অভিকর্ষের কারণে সমুদ্রের কিছু অংশের পানি ফুলে উঠে যা পরবর্তীতে বাতাসের প্রভাবে বড় ঢেউ এ রূপান্তরিত হয়। এই ঢেউ থেকেই সাগরের পানি প্রবাহিত হয়। সৃষ্টি হয় জোয়ার ভাঁটার।
চাঁদ না থাকলে বাতাসের প্রভাবে ঢেউয়ের সৃষ্টি হলেও তা বর্তমানের ঢেউয়ের আকৃতির থেকে অনেক ছোট হত। ফলে সমুদ্রের পানির প্রবাহ কমে যেত। যে কারণে সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্যের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যেত। ফলে অস্ত্বিত্ব থাকত না অনেক সামুদ্রিক প্রাণীরই। সমুদ্রের ইকোসিস্টেম পুরোপুরি ভিন্ন হত। যে কারণে আমাদের ভুগতে হত খাদ্য সমস্যায়। তাছাড়াও জাহাজ চেপে সমুদ্র ভ্রমন কিংবা সমুদ্রের সাহায্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহন প্রায় অসম্ভব হত।
সম্ভব হলেও তা হত অনেক ধীর গতিতে। ঢেউ না থাকলে তার প্রভাব সামুদ্রিক আবহাওয়াই পরিবর্তন দেখা যেত। মেরু অঞ্চলের পানি পুরোপুরি বরফ হয়ে যেত। ফলে মেরু তীরবর্তী অঞ্চলগুলোর তাপমাত্রা আরো কম হত। যা কোনো প্রাণীর টিকে থাকার জন্য প্রায় অসম্ভব হত।
ফলে পরিবর্তন হত পৃথিবীর আবহাওয়া। মেরু তীরবর্তী অঞ্চলে অতিরিক্ত শীত ও পৃথিবীর অক্ষরেখার মধ্যভাগের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়ে প্রচন্ড উষ্ণতে রূপান্তরিত হত। এ কারণে চাঁদ না থাকলে ঋতু পরিবর্তন বন্ধ হত এবং অবস্থান অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ঋতুই সারা বছর ধরে চলত।
তা ছাড়া চাঁদের আকর্ষণ না থাকায় হয়তো পৃথিবী যে অক্ষরেখা কেন্দ্র করে নিজের চারপাশে ঘুরছে, সেটা নড়ে যাবে। সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর প্রদক্ষিণতলের সঙ্গে তার অক্ষরেখার কৌণিক অবস্থানও বদলে যেতে পারে।
তখন এমন অবস্থা হতে পারে যে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে পালাক্রমে ছয় মাস অন্তর প্রচণ্ড শীত ও প্রচণ্ড গরম থাকবে। শেষ পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে পারে।
পৃথিবীর ঘূর্ণন বা অবস্থান পরিবর্তনের সময় পৃথিবীতে চাঁদের অভিকর্ষও কাজ করে। ফলে পৃথিবীকে নিজের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের অভিকর্ষও বহন করে প্রদক্ষিন করতে হয়। যে কারণে পৃথিবীর প্রদক্ষিনের সময়ও বেড়ে যায়। যদি চাঁদ না থাকত তবে পৃথিবীর ঘূর্ননের হার তথা প্রদক্ষিনের সময় কমে আসত।
ফলে পরিবর্তিত হত পৃথিবীর সময়। দিনের স্থায়ীত্ব হত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা এবং রাতগুলো দীর্ঘ হত।এ কারণে মানুষের কাজ করার সময় ও কমে আসত। তাছাড়াও কমে আসত এক বছরের স্থায়ীত্ব।একই সঙ্গে পৃথিবীর ঘূর্ণন বেড়ে গেলে পৃথিবীতে বাতাস এর গতিও বেড়ে প্রায় সব সময়ই টর্নেডোর গতির সমান হত। বাতাসের ঐ গতিতেবিলুপ্ত হত সকল পাখি।
মানুষ থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবজন্তুর টিকে থাকাও প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। শুধুমাত্র বড় গাছপালাই টিকে থাকতে পারত।এভাবেই চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে প্রানের অস্তিত্বই প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ