দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের (হাইকোট ও আপিল)বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অনুসন্ধানের জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন– সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (সার্বিক) মো. আবদুর রহমান এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অর্থ ও উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান।
এর আগে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে গত ৩১ ডিসেম্বর শপথ নেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরপর ২ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে নতুন প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা জানানো হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট ক্ষতকে আমরা ন্যূনতম প্রশ্রয় দেব না।’
মামলাজট নিরসন, বিচারপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা-গতিশীলতা আনা ও অনিয়ম অনুসন্ধানে পৃথক কমিটি গঠন করার কথাও সেদিন বলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টে, হাইকোর্ট বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়মসংক্রান্ত অভিযোগগুলো সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য একটি প্রিলিমিনারি ইনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হবে। এর চার দিনের মাথায় আজ প্রাথমিক অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করা হলো।
জানা যায়, মামলা দায়ের থেকে আদেশের অনুলিপি পেতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতির শিকার হচ্ছিলেন বলে অভিযোগ মিলছিল। জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন, উৎকোচের মাধ্যমে মামলার সিরিয়াল দেয়াসহ বিভিন্নভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি করে বেড়াচ্ছিলেন সেকশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, অনেক সময় নথি আদালতে পাওয়া যায় না। আবার কিছু অর্থ খরচ করলেই সেটি পাওয়া যায়। হাইকোর্টে মামলা কার্যতালিকায় আনা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয়। ফাইল পাওয়া না গেলে তো কথাই নেই। এতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এটা চলতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগের বেঞ্চ আর সেকশনের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের অনেক অভিযোগ৷ এছাড়াও আছে দালাল চক্র, যারা আদালতের সাথে কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট না হয়েও নানা প্রতারণায় যুক্ত৷
দুই হাজারেরও বেশি ‘টাউট বাটপার’ আছে আদালত এলাকায় ৷ আইনজীবীরা বলছেন, দুর্নীতি মুক্ত করতে হলে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে৷ অন্য সময়তো বটেই এমনকি করোনাকালের জিজিটাল আদালতেও সেকশন ও বেঞ্চের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতির নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন৷ শুধু তাই নয়, এটা বন্ধ করতে সেকশনে টোকেন সিস্টেম চালু করা হলে তার উল্টো প্রতিক্রিয়া হয়৷ লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেকশনের কাজে ঢিলেমি শুরু হয়৷
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতি অনিয়মের বাইরে সরাকারি কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। যেখানে দেশের আইন আদালতে দুর্নীতি অনিয়মের বিশাল ফিরিস্তি দেখা যায় সেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি রোধ প্রশ্নবিদ্ধ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ