আইনের শাসন সূচকে গত চার বছরে একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের (ডব্লিউজেপি) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে আইনের শাসনের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১২৪তম। এর আগে গত বছরের মার্চে প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশ ১২৮টি দেশের মধ্যে ১১৫তম ছিল। ২০১৯ সালে ১২৬টি দেশের মধ্যে এই অবস্থান ছিল ১১২। তার এক বছর আগে ২০১৮ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০২ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) গতকাল শুক্রবার বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচক প্রকাশ করেছে। এই সংস্থার সাবেক সভাপতিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইট ও কলিন পাওয়েলের মতো ব্যক্তিরা রয়েছেন। সংস্থাটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইনের শাসনের এই সূচক প্রকাশ করে আসছে।
সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনের শাসনের এই সূচক করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম, নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার প্রয়োগের দিক থেকে ১২২তম, ফৌজদারি বিচারের দিক থেকে ১১৭তম, দেওয়ানি বিচার পাওয়ার দিক থেকে ১২৯তম, দুর্নীতি না হওয়ার দিক থেকে ১১২তম, জননিরাপত্তায় ১১১তম এবং সরকারি তথ্য প্রকাশের দিক থেকে ১০২তম অবস্থানে রয়েছে।
এই বিষয়গুলোর পাঁচটিতেই বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে। শুধু জননিরাপত্তা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৩৮ হাজার খানা(পরিবার) এবং ৪ হাজার ২০০ জন আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে এই সূচক করা হয়েছে। বাংলাদেশের এক হাজার খানা (পরিবার) এবং আইন পেশাসংশ্লিষ্ট ১৭ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে।
সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনের শাসনের এই সূচক করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম, নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতার প্রয়োগের দিক থেকে ১২২তম, ফৌজদারি বিচারের দিক থেকে ১১৭তম, দেওয়ানি বিচার পাওয়ার দিক থেকে ১২৯তম, দুর্নীতি না হওয়ার দিক থেকে ১১২তম, জননিরাপত্তায় ১১১তম এবং সরকারি তথ্য প্রকাশের দিক থেকে ১০২তম অবস্থানে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আইনের শাসনে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে নেপাল (৭০তম)। এরপরেই শ্রীলঙ্কা (৭৬) ও ভারত (৭৯)। খারাপ অবস্থানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে পাকিস্তান (১৩০) ও আফগানিস্তান (১৩৪তম)। তবে সামগ্রিকভাবে আইনের শাসনের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশেরই অবস্থার অবনতি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটান ও মালদ্বীপের বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।
ডব্লিউজেপি সূচকে বাংলাদেশের পরেই রয়েছে উগান্ডা, হন্ডুরাস, জিম্বাবুয়ে ও মিয়ানমার। বিশ্বে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। সেখানে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দেশেই আইনের শাসনের অবনতি হয়েছে।
আইনের শাসন সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। অপর দিকে আইনের শাসনের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কঙ্গো, কম্বোডিয়া ও ভেনেজুয়েলায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সূচকে যেসব দেশ রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ দেশেই করোনাকালে আইনের শাসনের অবনতি হয়েছে। এসব দেশে বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের বসবাস। এসব দেশের মানুষের সংখ্যা ৬৫০ কোটি।
করোনাকালে আইনের শাসনে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে উজবেকিস্তানে। সবচেয়ে বেশি অবনতি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, নিকারাগুয়া, চেক রিপাবলিক ও আর্জেন্টিনা।
ডব্লিউজেপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল নিউকম বলেন, ‘এবারের আইনের শাসন সূচকে এত বেশিসংখ্যক দেশে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে যে তা আমাদের সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি দেশের মানুষের ন্যায়বিচার, সুযোগ প্রাপ্তি ও শান্তির মৌলিক ভিত্তি হলো আইনের শাসন। বৈশ্বিক মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের যে সময় আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে, সেখানে এই মৌলিক ভিত্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তার সারবস্তু হচ্ছে এটাই যে, দেশের মানুষ তার অধিকার থেকে কেবলই বঞ্চিত হয়ে পড়ছে। এর পরিণতি হচ্ছে নাগরিকদের নিগৃহীত আর নিঃসহায় হয়ে পড়া। সেই সাথে কিছু বৈপরীত্যও লক্ষ করা যায়। যেমন— সাধারণ মানুষের যখন এই হাল, তখন কিন্তু ‘অসাধারণ’ কিছু ব্যক্তির অন্যায় প্রাপ্তি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। যেখানে আইন তার সরলরেখায় চলতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়, সেখানে তখন সব ‘অসাধারণ’রা তা থেকে সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। আইনের শাসন অকার্যকর হলে এসব মানুষের অন্ধকারে পথ চলা খুব সহজ আর নিরাপদ হয়।
তারা বলেন, আইনের শাসনের কথা বলার আগে আমাদের পরিষ্কার হওয়া দরকার, আইন প্রয়োগের দায়িত্ব আমরা যাদের হাতে দিয়েছি, তারা কারা? তারা কতটা জনবান্ধব। জনগণের করের পয়সায় বেতন হলেও সেই জনগণকে তারা যে নিয়মিত হয়রানি করেন, নাজেহাল করেন, ব্ল্যাকমেইল করেন, পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মাদক আইনে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন, তারা কী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন? সুতরাং, বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে কী নেই বা কতটুকু আছে, তা বোঝার জন্য ডব্লিউজেপির গবেষণা প্রতিবেদনে চোখ না বুলালেও চলে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৪
আপনার মতামত জানানঃ