নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড শহরে একটি সুপারমার্কেটে স্থানীয় সময় শুক্রবার জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিউলিয়ান সুপারমার্কেটে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের(আইএস) অনুসারি এক ব্যক্তি হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাত করে ছয়জনকে গুরুতর আহত করেছে। পরে পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়। এ ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, ‘শুক্রবার অকল্যান্ড শহরের নিউলিয়ান সুপারমার্কেট নামে একটি শপিংমলে এক ব্যক্তি ছুরি নিয়ে প্রবেশ করে এবং হামলার মাধ্যমে কয়েকজনকে আহত করে। পরে পুলিশ ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে এবং একপর্যায়ে গুলিবর্ষণ করে। হামলাকারী ওই ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।’
এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তথ্য পাওয়া সাপেক্ষে পরে জানানো হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে হামলাকারী একজনই ছিল এবং হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুলিশ এখনও কোনো তথ্য দেয়নি।
তবে জরুরি সেবাদাতা একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, হামলার ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স এবং র্যাপিড রেসপন্স টিমের তিনটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, হামলায় আহত পাঁচ জনের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। এছাড়া একজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং অন্যজন হালকা আহত বলেও জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা ওই শপিংমলের ভেতরে ছুরির আঘাতে আহত কয়েকজনকে পড়ে থাকতে দেখেছেন। এছাড়া গুলির আওয়াজ শুনে আতঙ্কে কয়েকজন শপিংমলের বাইরে বেরিয়ে আসেন বলেও রয়টার্সকে জানিয়েছেন তারা।
তবে হামলাকারীর নাম প্রকাশ করা না হলেও জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি এই হামলা করেছেন বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে।
এদিকে ছুরি নিয়ে হামলার এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। তিনি বলেছেন, হামলাকারী ওই ব্যক্তি শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি নজরদারিতে ছিলেন।
তবে হামলাকারীর নাম প্রকাশ করা না হলেও জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি এই হামলা করেছেন বলে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন বলেছেন, ছুরি নিয়ে হামলার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যেই হামলাকারীকে হত্যা করে পুলিশ। তিনি বলছেন, ‘আজ যেটা ঘটেছে, তা আসলে জঘন্য। এটা ঘৃণিত।’
তিনি আরো বলেন, এটি একজন ব্যক্তি দ্বারা সংগঠিত ঘটনা, কোন বিশ্বাস দ্বারা নয়। হামলার ঘটনায় আমি মারাত্মকভাবে মর্মাহত হয়েছি।
নিউজিল্যান্ডে কোনও ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। নিউজিল্যান্ডের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশটিতে এ ধরনের গুলির ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩.৫ শতাংশ।
ওই ব্যক্তির হাতে কোনও বন্দুক ছিল কিনা তা এখনও নিশ্চিত করেনি পুলিশ। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় নিউজিল্যান্ডে বন্দুক ঘটিত অপরাধ খুবই কম। ২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলার পর সরকার আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন কঠোর করলেও দেশটিতে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ফুটেজে দেখা যায়, কাউন্টডাউন লিনমল সুপারমার্কেটে মানুষজন চিৎকার করছে এবং পালিয়ে যাচ্ছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এটা একটি ‘ভীতিকর’ পরিস্থিতি ছিল এবং মানুষজন লুকাতে বাধ্য হয়েছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০১১ সালের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা থেকে নিউজিল্যান্ডে পৌঁছান ওই ব্যক্তি। তবে ২০১৬ সাল থেকেই তার ওপর নজর রাখছিল দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। উগ্রবাদী মনোভাব এবং আদর্শের জন্যই পুরোটা সময়ই তিনি নিউজিল্যান্ডের নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে ছিলেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫৩
আপনার মতামত জানানঃ