মাগুরায় ৬৭ বছর বয়সি এক মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন না করে একতলা ছাদবিশিষ্ট ইটের নির্মিত পাকাঘরের ভেতর আটদিন ধরে রেখে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরা জেলা শহরের কাশিনাথপুর মধ্য কারিগরপাড়া গ্রামে। এলাকাবাসীর মতে মাজার বানানোর চেষ্টায় কিছু কুচক্রী লোক এই কাজ করেছিল।
ওই ঘরকে ঘিরে এলাকায় দেখা দিয়েছিল উত্তেজনা। জানা যায়, সেখানে মরদেহ কবর না দিয়ে ঘরের দরজা প্লাস্টার করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আজ সোমবার এলাকাবাসী সেই ঘরটি ভেঙে মরদেহ স্থানীয় কাশিনাথপুর গোরস্থানে কবর দিয়েছেন।
সূত্র মতে, মৃত ওই ব্যক্তির নাম তৈয়ব আলী। তিনি কিডনি সমস্যায় গত ২২ আগস্ট মারা যান। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহটি ঘরে রেখে পুরো দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মৃত তৈয়ব মোল্লার ভাবী বলেন, মৃত তৈয়ব মোল্লা ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন তাকে দাফন না করে এভাবে ঘরে রাখতে। তবে তিনি মৃত তৈয়ব মোল্লার লিখিত কোনো ওসিয়তনামা দেখাতে পারেননি।
জানা যায়, তৈয়ব আলী বিয়ে করেননি। তার বাবার নাম মৃত আরজু কারিকর। কোনো এক পীরের অনুসারী ছিলেন তিনি। মরদেহটি ঘর ভেঙে কবর দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তার ছোট ভাই হাশেম মোল্লা মানুষের ক্ষোভ দেখে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, ঝিনাইদহ জেলা থেকে আগত দুই-তিনজন ব্যক্তি মৃত তৈয়ব মোল্লাকে তার থাকার পাশের রুমটিতে রেখে রাজমিস্ত্রির সাহায্য নিয়ে ইটের গাঁথুনি দিয়ে প্লাস্টার করে দিয়েছেন দরজা।
এ ঘটনা ক্ষুব্ধ হন এলাকাবাসী। তারা বলেন, একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর মুর্দাকে গোসল, কাফন, জানাজার পর মাটিতে কবর দেয়া হয়। তাদের মতে, কয়েকজন ভণ্ড মাজার পূজারি এসে মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাশিনাথপুর জামে মসজিদের মুসল্লিদের মধ্যে প্রতিদিনই চলছিল সমালোচনার ঝড়। তাদের দাবি, একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর এরকম দাফন-কাফন ছাড়া রুমের মধ্যে রাখা বড় অন্যায়। কাশিনাথপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং কাশিনাথপুর এলাকা সূত্রে জানা যায়, মৃত তৈয়ব মোল্লার দাফন-কাফনের বিষয় ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, এই মৃতদেহকে ঘরের মধ্যে রেখে এখানে মাজার বানানোর পাঁয়তারা করছিল কিছু লোক।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সজল হোসেন বলেন, গত ২২ আগস্ট তার মৃত্যু হয়েছে। তার জানাজায় তার আত্মীয়স্বজন এবং ভক্তরা অংশ নেয়। ভক্তদের কাউকে আমরা চিনি না। জানাজা শেষে তাকে তার বসবাসের ঘরে নিয়ে রাখা হয়। ভক্তরা ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। ওই ঘরে কোনো জানালা না থাকায় ঘরের ভেতরে কী আছে আমরা কেউ বলতে পারছি না।
স্থানীয় কমিশনার আসিফ আল আসাদ মেলিন জানান, মুসলিম হয়েও তার কবর দেওয়া হয়নি। তাকে ঘরে রেখে অন্যরা ঘরের একমাত্র প্রবেশের দরজা প্লাস্টার করে বন্ধ করে দেয়। এই ঘরটিকে মাজার করতে চেষ্টা করা হয়েছিল। ঘরটিকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে নেশা দ্রব্যের আড্ডাও জমে ওঠে। এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে ঘরটি ভেঙে আমরা মরদেহটি ইসলামি নিয়ম অনুসারে কবর দিয়েছি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ