মাগুরা সদর উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের মাটি ও কৃষিপণ্যের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় মাত্রাতিরিক্ত হারে প্রাণঘাতী সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার ফলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য খাদ্য তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
জানা যায়, মাগুরা সদরের বগিয়া ইউনিয়নের বারাশিয়া গ্রামের উত্তর পাড়ার মাঠের মধ্যে ইটভাটার পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠে একটি সিসার মণ্ড তৈরির কারখানা। সেখানে পুরনো ব্যাটারি থেকে সিসা গলিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। এতে ওই এলাকার বায়ুমণ্ডলে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯টি গবাদিপশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসীর মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানানো হয়, বারাশিয়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় একের পর এক গবাদিপশু মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। আশপাশের মাটি, ধান, গম, ঘাসসহ ১১টি বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষার পর ওই এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত হারে সিসার উপস্থিতি মিলেছে যা প্রাণহানিকর।
নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, সুস্থ্য ধানগাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্যে সিসার মাত্রা ০.০০২ পিপিএম সহনীয় হলেও বারাশিয়া গ্রামের নমুনা পরীক্ষায় ৮.০৫ পিপিএম থেকে ১৬৬.৪১ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া যায়। একই ভাবে ধান গাছের খড়ে পাওয়া যায় ০.৭৮ পিপিএম থেকে ২৬.৪৬ পিপিএম পর্যন্ত। ঘাসে পাওয়া যায় ৩৬.৫২ পিপিএম থেকে ২০২২.৪৭ পিপিএম। ওই গ্রামের মাটি পরীক্ষায় ৩৬.৫২ পিপিএম থেকে ৫৬.৬৮ পিপিএম পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। অথচ এসব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা মাত্র ০.০০২ পিপিএম।
এ অবস্থা বিবেচনায় বিগত সময়ে সেখানকার ২৯টি গরু মৃত্যুর কারণ সেখানকার পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি বলে মনে করছেন জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ ।যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানকার ক্ষেতসমূহে উৎপাদিত পণ্য খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়াতে কৃষকেরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা পূরণের কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় বিপাকে পড়বেন কৃষকেরা। কৃষকের দেওয়া এতো শ্রম, বিনিয়োগ বিফলে যাওয়ার বিষয়ে পরিষ্কার না করে কৃষকের পণ্য বাতিলের জোর সমালোচনা করেন তারা। একই সাথে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা সিসা কারখানা কেবল বন্ধ করে দেওয়াতে সীমাবদ্ধ থাকাতেও ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে বলে মনে করেন। মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতিতে স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়েছে তারও সুষ্ঠ সমাধান দাবি করেন। এবং সিসা ছড়িয়ে পড়াতে যে ২৯টি গবাদিপশুর প্রাণহানী ঘটলো তারও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৭
আপনার মতামত জানানঃ