কানাডার পের্মাফ্রস্টে ৫৭ হাজার বছর পুরানো নেকড়ের মমি পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে নেকড়েটি সবচেয়ে প্রাচীন জাতের। এর বয়স ৫৭ হাজার বছর। এই প্রাণীটির বিষয় আরও গভীর ভাবে গবেষণার জন্য অনুমতি নিয়েছেন গবেষকরা। এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন মৃত নেকড়েটির মমি কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কানাডার উত্তরাঞ্চলীয় ইউকোন টেরিটরিতে চলছিল স্বর্ণখননের কাজ। জল কামান দিয়ে খনির দেয়াল ধসিয়ে খোঁজা হচ্ছিল সেটি। তবে মিললও তার চেয়েও বিশেষ কিছু। সোনার বদলে বেরিয়ে এল মাটির নিচে ‘পের্মাফ্রস্ট’ হয়ে জমে থাকা বরফের মধ্যে সংরক্ষিত ৫৭ হাজার বছরের নেকড়ের অক্ষত মৃতদেহ।
স্বর্ণখনির শ্রমিক নিল লাভলেসের নজরে আসে প্রথম বিষয়টি। দ্রুত বরফ গলিয়ে নেকড়ের মৃতদেহটি বার করে আনেন তিনি। সময় নষ্ট না করেই তা ঢুকিয়ে দেন একটি ফ্রিজে। পরে ডেস ময়নেস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের হাতে নেকড়ের মৃতদেহটি তুলে দেয়া হয়।
দেহটির পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা জানান, প্রাগৈতিহাসিক এই প্রাণীটির ত্বক থেকে শুরু করে লোম পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে এখনো। শুধু নষ্ট হয়ে গেছে তার চোখ।
গবেষকদের প্রাথমিক অনুমান, কোনো গুহায় থাকার সময় তা ভেঙে পড়েই মৃত্যু হয়েছিল নেকড়ে শাবকটির। তারপর বরফের তলায় চাপা পড়ে যাওয়ায় পচন ধরতে পারেনি তার দেহে। গবেষকদের মতে জীবটির আনুমানিক বয়স মাত্র ৭ মাস।
কানাডার ওই অঞ্চলে প্রচলিত প্রাচীন ‘হান’ ভাষায় নেকড়ের নাম ‘ঝুর’। সেই নামানুসারেই সদ্য-আবিষ্কৃত নেকড়ে শাবকটির এই মমির নামকরণ করা হয়েছে। ঝুরের দেহের বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক এই প্রাণীর শুধু জীবনযাপনই নয়, বরং খোঁজ মিলবে খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারেও। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি এই প্রজাতির ব্যাপারে আরো অজানা তথ্যের সন্ধানে সংরক্ষণ করা হয়েছে ঝুরের দেহের ডিএনএ-ও।
বর্তমান নেকড়ের প্রজাতির থেকে আইস-এজের এই প্রজাতির চরিত্র অনেকটাই আলাদা ছিল বলে অনুমান বিজ্ঞনীদের। এর আগেও সাইবেরিয়া থেকে পাওয়া গিয়েছিল হিমায়িত ভল্লুক এবং প্রাচীন কুকুরের মৃতদেহ। তবে তা পুরোপুরি অক্ষত ছিল এমনটা নয়। ফলে গবেষণার পরিধি অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এবার ঝুরের বদৌলতে সম্পূর্ণ বিবর্তন এবং অভিবাসনের সেই হদিশই পেতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা বলেছেন, যদিও বেশ কয়েকটি ভালো নেকড়ের বাচ্চা সাইবেরিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উত্তর আমেরিকায় পাওয়া এই মমিটি বিশেষত বিরল ছিল বলে জানিয়েছেন তারা। ধারনা করা যায় কানাডার পের্মাফ্রস্ট এলাকার আশেপাশে প্রচুর নদী প্রবাহিত হয়েছিল এবং আশেপাশে অন্যান্য প্রাণীরও বসবাস ছিল। বন্য পরিবেশের মধ্যেই নেকড়েটি বড় হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের প্রকাশিত এক রিপোর্টে ডেস মানিয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক জুল মিয়াচেন জানান, প্রাণীটির স্থানীয় নাম ঝুর। এই মমিটির এখনো সমস্ত ত্বক পশম দিয়ে ঢাকা ও ভিতরের টিস্যু গুলোও বিদ্যমান।
তিনি আরও জানান, এর বয়স প্রায় ৫৭ হাজার বছর। এই প্রাণীটির বিষয় আরও গভীর ভাবে গবেষণার জন্য অনুমতি নিয়েছেন গবেষকরা। এক্স-রে মেশিনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা জানতে পারেন মৃত নেকড়েটির মমি কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, এই নেকড়েটি আধুনিক নেকড়েদের পূর্বপুরুষ যা রাশিয়া, সাইবেরিয়া এবং আলাস্কা থেকে এসেছিল।
মিয়াচেন বলেন, ধারণা করা যায় কানাডার পের্মাফ্রস্ট এলাকার আশেপাশে প্রচুর নদী প্রবাহিত হয়েছিল এবং আশেপাশে অন্যান্য প্রাণীরও বসবাস ছিল। বন্য পরিবেশের মধ্যেই নেকড়েটি বড় হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫২
আপনার মতামত জানানঃ