নিজস্ব প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন অনলাইনের বহুল আলোচিত প্রতারক রহমতউল্লাহ (৩৬) নামে এক ভুয়া পুলিশ। বুধবার (১১ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের এস.ও.রোড এলাকায় চাঁদাবাজি করতে গেলে তাকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, পুলিশ পরিচয়ে ছিন্নমূল শিশুদের একটি বিদ্যালয়ের নামে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলের কাছে চাঁদা আদায় করতে যান রহমতউল্লাহ। এতে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ সময় পুলিশ তার তার কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি এবং তার মুঠোফোনে ডিএমপি ও জেলা পুলিশের পোশাক পরা কয়েকটি ছবি উদ্ধার করে।
রহমতউল্ল্যাহ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে অভিনব কৌশল অবলম্বন করে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণা ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনলাইনে রহমউল্ল্যাহ’র একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক আছে। সে নিজেকে কখনো গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার, কখনো এনএসআই এর সদস্য, কখনো র্যাব বা পুলিশ প্রধানের ঘনিষ্ট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আইনী জটিলতায় পড়া মানুষজনদের টাকার বিনিময়ে সহযোগীতা করার আশ্বাস দিয়ে নিয়মিত প্রতারণা করতো। এমনকি বিভিন্নজনকে বিচারকদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে হাইকোট, জর্জকোর্টে বিচারাধীন মামলা থেকে মুক্তি বা জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতো।
রহমতউল্ল্যাহ তার কথিত ছিন্নমূল শিশুদের স্কুলের কথা বলে নিজেকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে আসছিল। নিজেকে একসময় মুক্তমনা পরিচয় দিয়ে ৫৭ ধারায় আটক অনেককের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের থেকে চাঁদা তুলে রহমতউল্ল্যাহ প্রতারণার মাধ্যমে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অসংখ্য অভিযোগ আছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা রহমতউল্লার প্রতারণার ফাঁদে পড়েছিলেন বলে ফেসবুকে তার আইডি থেকে স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে জানান। তিনি ফেসবুকে লিখিতভাবে জানান, গত ২৫ অক্টোবর কথিত সেই ভুয়া পুলিশ আমার কাছে এসে বললেন- চাষাঢ়া রেললাইনের পাশে ১৫০জন অসহায় শিশুদের নিয়ে একটি ছিন্নমূল স্কুল খুলেছেন। সেই স্কুলটি চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই সে আমার কাছে কিছু আর্থিক সাহায্য চান। আমি তাকে একহাজার টাকা দেই এবং পরবর্তীতে কোনো সমস্যায় পড়লে আবার সাহায্য করবো বলে আশ্বাস দেই। কিন্তু আজ জানতে পারলাম সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মণ্ডল সেই ভুয়া পুলিশকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তির নাম ভাঙিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে চাঁদাবাজি করার অসংখ্য অভিযোগ আছে রহমতউল্ল্যার বিরুদ্ধে। মিষ্টভাষী এবং শিক্ষিত এই প্রতারকের প্রতারণায় শিকার হয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের কয়েকজন এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রতারক রহমতউল্ল্যা একা নন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিশাল এক নেটওয়ার্ক আছে। ফেসবুকে প্রতারক রহমতউল্ল্যাহ N Rahamat Si (Investigetor) আইডি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার কাজ করতো। বাংলাদেশ ছাড়াও রহমতউল্ল্যাহ’র প্রতারণা নেটওয়ার্ক ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালী কমিউনিটি পর্যন্ত বিস্তৃত বলে তারা জানিয়েছেন। পুলিশ সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করলে রহমতউল্ল্যাহর পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরেও রহমউল্ল্যাহ পুলিশ বা র্যাবের কর্মকতা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে প্রতারণা করতে গিয়ে এই প্রতারক পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই আশংকা করছে টাকার বিনিময়ে এবং আইনী দূর্বলতায় প্রতারক রহমতউল্ল্যাহ ছাড়া পেয়ে যেতে পারেন।
অভিযুক্ত রহমতউল্লাহর বাড়ি ঝালকাঠি সদরের ডাক্তারপট্টি এলাকায়। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তক্কার মাঠ এলাকার একটি বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন তিনি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রহমতউল্ল্যাহর অপকর্মের প্রধান সহযোগী তার স্ত্রী অন্নি রহমত লিজা। রহমতউল্ল্যাহ’র ফেসবুক আইডিতে পুলিশের পোষাক পরিহত অনেক ছবিতে তার স্ত্রীকে পাশে দেখা যায়।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মেহেদী হাসান বলেন,পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে রহমতউল্লাহকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিই/নসদ/১৬৪৪
আপনার মতামত জানানঃ