কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই রাজধানীর আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। প্রয়োজনে লকডাউন এলাকা বাড়ানো হবে, এমন ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এমতাবস্থায় সারা দেশে আবারও সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হবে কিনা এ প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে।
করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সারা দেশে আবারও লকডাউন ঘোষণা হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বুধবার জানিয়েছে, সারা দেশে আপাতত লকডাউন নয়। তবে পরিস্থিতি যদি নাজুক হয় এবং প্রতিটি জেলায় যদি সংক্রমণ ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়, তা হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত নিয়মিত করোনা বুলেটিনে এ কথা বলেছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রথম থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৩ শতাংশের মত হলেও গত সাত দিনের পরিসংখ্যান যাচাই করলে দেখা যাবে মৃত্যুর হার এবং সংক্রমণ শনাক্তের হার বেড়েই যাচ্ছে।
বিভিন্ন বিভাগের পরিসংখ্যান তুলে ধরার সময় তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোভিড পজিটিভ হওয়ার হার (সাপ্তাহিক পরিবর্তন হার) বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশে, খুলনাতেও প্রায় ৫০ ভাগ, চট্টগ্রামে প্রায় ৪২ শতাংশ আর ময়মনসিংহে ৬১.৯ ভাগ।
এমন অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং হাসপাতালে সেবাদান প্রক্রিয়া স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপ মেনে না চললে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ২২শে জুন থেকে ৯ দিনের জন্য রাজধানীকে দেশের বাকি অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে ঢাকার আশেপাশের ৭টি জেলায় নয় দিনের বিশেষ বিধিনিষেধ বা লকডাউন জারি করা হয়েছে।
এর আগে কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় রাজশাহী, সাতক্ষীরা-সহ সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি জেলায় একই ধরনের লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল।
করোনায় ৮৫ জনের মৃত্যু
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্ত বেড়েছে গতকালের তুলনায় বেড়েছে। নতুন করে ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৫৫জন ও নারী ৩০জন। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭২৭ জনের। রোগী শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ। গতকাল ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর শনাক্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৮৪৬ জনের।
আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে এ পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৭ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৬৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এরপর ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহে ৩ জন, রংপুর ও বরিশালে ১ জন করে ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সিলেটে এ সময়ের মধ্যে করোনায় কোনো মৃত্যু হয়নি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।
দেশে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি এপ্রিলের মতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়ছে।
ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন বন্ধ
রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ঢাকা থেকে সারাদেশে কোনো ট্রেন চলাচল করবে না। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ নির্দেশনা চলবে।
রেল মন্ত্রণালয়ের এডিজি (অপারেশন) সরদার সাহাদাৎ আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঢাকা থেকে দেশের অন্য কোথাও ট্রেন চলবে না এবং সারাদেশ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো ট্রেন ছাড়বে না। তবে ঢাকার বাইরে অন্যান্য জায়গায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের ৭টি জেলায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এই সাতটি জেলা হল মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ , মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী। আগামী ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে এই লকডাউন কার্যকর হবে। চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।
সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ খবর জানিয়েছেন। লকডাউন চলাকালে সাধারণ জনগণের চলাচল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব জেলায় সরকারি-বেসরকারি-আধা সরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৮১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ