মঙ্গলের বাতাসের প্রায় সবটাই কার্বন ডাই অক্সাইড। প্রায় ৯৬ শতাংশ। আর অক্সিজেন মাত্র ০.১৩ শতাংশ। যেখানে পৃথিবীতে বাতাসের ২১ শতাংশ হল অক্সিজেন। স্পষ্টতই মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে থাকা অক্সিজেনের পরিমাণ মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এই প্রতিবন্ধকতাও ভেঙে দিল নাসা। তৈরি করা হল নিঃশ্বাসযোগ্য অক্সিজেন।
মঙ্গলের বুকে এই অক্সিজেন তৈরি করেছে নাসার রোভার পারসিভেরান্স। বুধবার এই সফল প্রয়াসের কথা জানাল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
মঙ্গল অভিযানে এটি নাসার দ্বিতীয় প্রযুক্তিগত সাফল্য। এর আগে পারসিভেয়ারেন্স থেকে একটি মিনি হেলিকপ্টার উড়েছিল মঙ্গল গ্রহের ওপর।
তবে নাসার স্পেস টেকনোলজি মিশনের কর্তা জিম রয়টার জানান, ‘মঙ্গল গ্রহে বিদ্যমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরির ক্ষেত্রে এটি প্রথম ও বড় পদক্ষেপ।’
সূত্র মতে, গত ২০ এপ্রিল সফলভাবে অক্সিজেন তৈরি করে পারসিভেরান্স।
‘মোক্সি’
মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন তৈরি করেছে যে যন্ত্রটি, সেটির নাম ‘মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন’ বা সংক্ষেপে মোক্সি। এটি আকারে একটা পাউরুটি সেঁকার টোস্টারের সমান।
গবেষক দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, প্রথম রান-এ মোক্সি ৫ গ্রাম অক্সিজেন উৎপাদন করে। এতে একজন নভোচারী প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস নিতে পারবেন। আপাতত ঘণ্টায় ১০ গ্রাম করে অক্সিজেন প্রস্তুত করতে সক্ষম এই যন্ত্র।
মোক্সির নকশা তৈরি হয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষণাগারে। নিকেলের সংকর দিয়ে তৈরি এই যন্ত্র প্রায় ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তাপ সহ্য করতে সক্ষম।
মঙ্গল গ্রহে অক্সিজেন তৈরির উদ্দেশ্য কী?
নাসা, স্পেসএক্সে কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতে মঙ্গলে মানুষ প্রেরণ করা। সেক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নভোচারীদের থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেনযুক্ত বাতাস। সেই কারণেই এই প্রয়াস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া রকেটেও জ্বালানির সুষ্ঠ দহনের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন।
মঙ্গলের মাটিতেই যদি অক্সিজেন প্রস্তুত করা যায় সেক্ষেত্রে তা হবে সুবিধাজনক। মঙ্গল থেকে ফিরতি পথে সেই অক্সিজেন ব্যবহার করা যাবে রকেটে। পৃথিবী থেকে অতিরিক্ত বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
এ প্রসঙ্গে নাসার স্পেস টেকনোলজি মিশন পরিচালনা কমিটির প্রযুক্তি বিষয়ক পরিচালক ট্রেডি কোর্টেস বলেন, ‘নাসা মনে করছে, ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে মানুষের অভিযানের সময় তাদের পুরোটা সময়ের জন্য যে অক্সিজেনের দরকার হবে তা পৃথিবী থেকে বহন করে নেয়ার পরিবর্তে মোক্সি নামের এই যন্ত্রটিরই আরও বড় কোন সংস্করণ সাথে নেয়া যেতে পারে।’
কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরি
কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন উৎপাদনের মূল কারণ মঙ্গলে কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রতুলতা। মঙ্গল গ্রহের ৯৬%-ই কার্বন ডাই অক্সাইড। ফলে এটিই সহজতম পন্থা।
এছাড়াও তাত্ত্বিকভাবে বলা হয় যে মঙ্গলের ভূস্তরের নিচের বরফ বের করে সেটা ইলেক্ট্রোলাইজিং করে অক্সিজেন উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে তা বেশ কঠিন, ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।
মোক্সি নামের যন্ত্রটি মঙ্গলের কার্বন ডাই অক্সাইডের অণু থেকে অক্সিজেন বের করতে পারে। কার্বন ডাই অক্সাইডের প্রতিটি অণুতে থাকে কার্বনের একটি এবং অক্সিজেনের দুটি পরমাণু।
আর এই অক্সিজেন বের করে নেয়ার পর যে কার্বন মনোক্সাইড অবশেষ হিসেবে থেকে যায়, তা ছেড়ে দেয়া হয় মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহেই মঙ্গলে সফল উড়ান হয় নাসার হেলিকপ্টার ইনজেনুইটির। তাতে ছিল রাইট ব্রাদার্সদের তৈরি বিশ্বের প্রথম বিমানের কাপড়।
নাসার রোভার পারসিভেরান্সের সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতেই মঙ্গলে পৌঁছায় হেলিকপ্টারটি। প্রায় ৬ মাস যাত্রার পর নির্বিঘ্নে মঙ্গলের মাটি ছোঁয় পার্সিভিয়ারেন্স ও ইনজেনুইটি।
চলতি মাসের শুরুতেই পার্সিভিয়ারেন্স-এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেরিয়ে আসে হেলিকপ্টারটি। হেলিকপ্টারটির মিশন দৈর্ঘ্য মোট ৩০ দিন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২৩৪৪
আপনার মতামত জানানঃ