বিশেষ প্রতিবেদক : ভারত-পাকিস্তানের গত মাসের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের ভীত মূলত গড়ে ওঠে ২০১৮ সালে লন্ডনের হোটেলে দুইদেশের গোয়েন্দাবিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একক বৈঠকের পর, সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে এমনটাই নিশ্চিত করেছে নিউজ১৮।
সূত্র মতে, ওই বৈঠকটির অনুমোদন দিয়েছিল পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার রশীদ বাজওয়া এবং ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এসএসএ) অজিত কুমার দোভাল। এই আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পরপরই।
সূত্র মতে, পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এবং ভারতের রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং (র) এর মধ্যে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় ২০১৯ সালে, জম্মু ও কাস্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর। কাশ্মীরের পুলওয়ামা ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসে। যদিও এখন দুই দেশই সম্পর্কের উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
ব্লুমবার্গ রিপোর্ট
সোমবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ দাবি করে, আমিরশাহি সরকারের হস্তক্ষেপেই চারটি পদক্ষেপে শান্তির পথ বেছে নেয় ভারত-পাকিস্তান। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিরেক্টর্স জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন সীমান্তরেখায় অস্ত্রবিরতির আচমকা সিদ্ধান্ত নেয়, তা আমিরশাহির কারণেই।
২৬ ফেব্রুয়ারি আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা বিন জায়েদের দিল্লি ভ্রমণ শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই, বলে দাবি করা হয়েছে।
ব্লুমবার্গ বলছে, এলওসি-তে অস্ত্রবিরতি ওই চার পদক্ষেপের প্রথম, আরও অনেক কিছু ঘটতে চলেছে। এরপরের পদক্ষেপ হবে দিল্লি এবং ইসলামাবাদে রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে আনা। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর প্রতিবাদে দূতদের দেশে ফেরত নিয়ে যায় পাকিস্তান।
তারপরের ধাপ হবে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক শুধরানো এবং সাত দশকের কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এই সমস্ত দাবি অবশ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটির।
পাক-ভারত যুদ্ধবিরতিতে প্রতিবন্ধকতা
ভারতের জেনারেল বাজওয়া ২০১৮ সালে লন্ডন সফর করেন। যেখানে তিনি ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল নিকোলাস কার্টার এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্ক সেডউইলের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতে পারমানবিক শক্তিধর দেশ ভারত-পাকিস্তানের ভুল পদক্ষেপের মাধ্যমে বড় ধরণের বিপর্যয় ডেকে আনার বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২০১৭ সাল থেকেই ব্রিটেইনের সাথে দারস্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে জন্য।
জেনারেল বাজওয়া জানান, পাকিস্তানের এই ধরণের সিদ্ধান্তের কারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অধিক সুসংহত করে জেহাদি দলগুলো ধ্বংস করা।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তরফ থেকে ভারতকে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এরপর সূত্র মতে জানা যায় আইএসআই এবং র-এর কর্মকর্তারা তিনবার বৈঠক করেন। এই সব বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় ঝুঁকি কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
২০০৩ সালে হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি রক্ষাই নতুন চুক্তির লক্ষ্য। তখন ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ও লাইন অফ কন্ট্রোলে শান্তি বজায় রাখাই সেই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল। এটা কার্যকরও হয়েছিল। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সীমান্তে একটি গুলিও ছোঁড়া হয়নি। এরপরই নাটকীয়ভাবে পরিস্থিতির অবনতি হয়।
ব্রিটেন একমাত্র পশ্চিমা দেশ ছিল যারা সে সময় ভারত-পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে জেনারেল বাজওয়ারও ব্রিটেনের সাথে রয়েছে সুসম্পর্ক।
নয়াদিল্লিতেও খুব কম মানুষ বিশ্বাস করেছিল এই সিক্রেট চ্যানেল দুই দেশের যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। যদিও এতে পাকিস্তানি সেবাবাহিনীর সরাসরি সমর্থন ছিল। নরেন্দ্র মোদিও যুদ্ধবিরতিকে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি ২০১৫ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের মেয়ের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৬ এর প্রথমদিকে ভারতের একটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হওয়া সন্ত্রাসী হামলা পরিস্থিতিকে নাজুক করে দেয়। এরপর ওই বছরের শেষের দিকে ভারতের উরিতে হামলা হলে, পাল্টা জবাব দেয় ভারত। দু’দেশের সমস্ত প্রচেষ্টা নসাৎ করে নিয়ন্ত্রণরেখায় আবারও ফিরে আসে যুদ্ধাবস্থা।
এরপর ২০১৭ সালের শেষের দিকে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসির খান ব্যাংককে দোভালের সাথে সাক্ষাৎ করেন। যদিও সম্পর্ক উন্নয়নের ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এরপর ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় বোমা হামলা হয়। যার কারণে ভারতীয় বিমান বাহিনী বালাকটে এবং পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় হামলা চালায়। এর ফলে লন্ডনের যুদ্ধবিরতি আলোচনার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। দু’দেশর পক্ষেও এরপর আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী যদিও এরপরও যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন দরজার সন্ধান করতে থাকে। বিভিন্ন হামলার তথ্য তারা ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগকে জানায়। পাশাপাশি দেশটির বিভিনি জেহাদি দলগুলোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়।
যুদ্ধের সম্ভাবনা থেকে ভারতের সাথে সুসম্পর্কে থাকা দেশগুলো পাক-ভারত আলোচনার জন্য নয়াদিল্লিকে উৎসাহিত করতে থাকে। আর আমিরাত তাদের মধ্যে অন্যতম। দেশটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থার অবসানে ‘ওয়ার্ডস অব উইশডম’-এর পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানায়।
ইসলামাবাদ ভিত্তিক সূত্র থেকে জানা যায়, জেনারেল বাজওয়া ২০১৯ সালের জুন মাসে লন্ডনে আরও একটি সফরে যান। সেবার তিনি ব্রিটেনের আলোচকদের নয়াদিল্লিকে যুদ্ধবিরতিতে উৎসাহিত করার জন্য প্রস্তাব রাখেন। যদিও পাকিস্তানি কিছু রাজনৈতিক নেতা ভারতের উপর আর্টিকেল ৩৭০ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করে ২০১৯ সালের আগস্টে। যা অবস্থাকে সঙ্গীম করে তোলে। এছাড়া নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে জেহাদী দলগুলোর সন্ত্রাস চলছি পুরোদমে।
জেনারেল বাজওয়ার শক্ত অবস্থান
‘দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ায় মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে এই দুই অঞ্চলের সমৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজ লাগাতে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত এই দুই পারমানবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরোধে সেই সম্ভাবনা জিম্মি হয়ে রয়েছে’, বলে জানান জেনারেল বাজওয়া।
জেনারেল বাজওয়া স্বীকার করেন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে বৈরিতার মূলে রয়েছে কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ। তিনি বলেন, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি অতীতকে কবর দিয়ে দুই দেশের উচিত সামনে তাকানো।
তিনি বলেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হলে উপমহাদেশের শান্তি এবং বোঝাপড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বোলচালের ঝুঁকিতে থেকে যাবে।
জেনারেল বাজওয়া বলেন, ভারতের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে পাকিস্তানের এই নীতিগত সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো চাপ নেই বরং রয়েছে বাস্তব যুক্তি।
এক্স-ফ্যাক্টর কাশ্মীর
ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার মূলে রয়েছে কাশ্মীর। মোদী সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজের পর এই বৈরিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। তাহলে জেনারেল বাজওয়া কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের যে কথা বলছেন তা কীভাবে হতে পারে?
লন্ডনে সোয়াস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির গবেষক এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আয়েশা সিদ্দিকা মনে করেন, জেনারেল বাজওয়ার হাতে কাশ্মীর নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফের ফর্মুলার পুনরুত্থান করা ছাড়া তেমন কোনো বিকল্প নেই।
ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকায় ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রিত অংশে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে জেনারেল মুশাররফের সাথে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। জেনারেল কায়ানি (তৎকালীন পাকিস্তান সেনাপ্রধান) সেই বোঝাপড়া নস্যাৎ করে দেন।
ড. সিদ্দিকা বলেন, ভারত কাশ্মীরের সমাধানে ইচ্ছুক কারণ চীনের সাথে বিরোধ বাড়ায় কাশ্মীর সীমান্তে চাপ কমলে তা তাদের স্বার্থের পক্ষে যাবে।
কিন্তু, তিনি বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে, রাজনীতিকদের মধ্যে কাশ্মীরের সমাধান নিয়ে ঐক্যমত্য কতটা – সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
শান্তি চুক্তিতে অর্থনৈতিক ফায়দা পাকিস্তানের!
ড. আয়েশা সিদ্দিকা জানান, পাকিস্তান সেনাপ্রধান এবং ক্ষমতাসীন সরকারের মূল লক্ষ্য ভারত যতটা তার চেয়ে বেশি আমেরিকা। আর এই বার্তার পেছনে সবচেয়ে প্রধান যে অনুঘটক তা হলো পাকিস্তানের অর্থনৈতিক তাড়না।
ড. সিদ্দিকা বলেন, পাকিস্তান বুঝতে পারছে যে, আমেরিকার প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের নীতিতে তারা অনুপস্থিত। যেখানে মধ্যমণি ভারত পাকিস্তানের বড় মাথাব্যথার কারণ। জেনারেল বাজওয়া বলেছিলেন চীনের সাথে তাদের অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) অর্থ এই নয় যে পাকিস্তান শুধু সেটির ওপরই ভরসা করছে। এদিকে পাকিস্তান সেনাপ্রধান বৃহস্পতিবার বলেছেন যদিও আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সিপিইসি এখন পাকিস্তানের বড় অগ্রাধিকার, কিন্তু শুধু সিপিইসির কাঁচ দিয়ে পাকিস্তানকে দেখা ঠিক নয়।
ড. সিদ্দিকা বলেন, চীন পাকিস্তানের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে ৪৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে ঠিকই কিন্তু তার সবটাই দীর্ঘমেয়াদী ঋণ, নগদ কোনো অর্থ নয়। ঋণের এই টাকা শোধ দেওয়া নিয়েও এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের নগদ অর্থের সংকট বাড়ছে। সম্পর্ক চটে যাওয়ায় ইউএই, সৌদি আরব তাদের ঋণের টাকা ফেরত চাইছে। আমেরিকার কাছ থেকে যে নগদ অর্থ আসতো তাতেও ঘাটতি পড়েছে।
ড. সিদ্দিকা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এখনও অত্যন্ত প্রয়োজন পাকিস্তানের। আইএমএফের টাকা নিতেও আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠতা দরকার।
পশ্চিমা বিনিয়োগের জন্য এখনও আমেরিকার সাথে সম্পর্কের গুরুত্ব অনেক। চীন সম্প্রতি পাকিস্তানের তৈরি পোশাকের জন্য বাজার খুলে দিয়েছে, কিন্তু এখনও পাকিস্তানের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।
তাছাড়া, তিনি বলেন, সম্পর্ক ভালো হলে ভারতের বিশাল বাজারও পাকিস্তানের জন্য বিরাট সুযোগ তৈরি করবে।
সীমান্তে রক্তপাত বন্ধের আশাবাদ
সূত্র মতে, পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দেশ দুটি ২০০৩ সালে কাশ্মীর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসে তা ভেঙে যায়। ফলে, ডি ফ্যাক্টো সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী গ্রামবাসীদের মধ্যে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।
এরপর চলতি বছরের ২৪/২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এবং অন্যান্য সব সেক্টরে চুক্তি, বোঝাপড়া এবং গোলাবর্ষণ বন্ধের ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।
অস্ত্রবিরতিতে ফিরে আসার বিষয়টি দুই দেশের সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান বিষয়ক মহাপরিচালকরা নিষ্পত্তি করেন।
সীমান্তে পারস্পরিক সুবিধা এবং টেকসই শান্তি অর্জনের স্বার্থে দুই দেশের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালকরা একে অপরের মূল সমস্যা চিহ্নিত এবং শান্তি বিঘ্নিত করার প্রবণতা ও সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতার উদ্বেগ মোকাবিলায় সম্মত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, প্রায় ৩০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
সূত্রটি বলেছে, ‘এ বছর মাত্র দুই মাসে ২৫৩ বার অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে আটজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন।’
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেশটির সংসদ জানায়, ২০২০ সালে জম্মু-কাশ্মীরের লাইন অফ কন্ট্রোল ও অন্যান্য সীমান্তে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের ৫১৩৩ টি ঘটনা ঘটেছে এবং এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন। তবে ডন পত্রিকা বলছে, শর্ত লঙ্ঘনের ঘটনা আসলে তিন হাজার এবং এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৮ জন।
কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। তারা এই অঞ্চলকে পুরোপুরি নিজেদের দাবি করলেও একটি নির্দিষ্ট অংশ শাসন করে থাকে। কিন্তু, ২০১৯ সালের আগস্টে নয়াদিল্লি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করে এবং দুটি ফেডারেল প্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করে। এরপর থেকে নতুন করে এই অঞ্চলে উত্তেজনা শুরু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়াদিল্লির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সহিংসতার মাত্রা এবং উত্তেজনা কমবে।’
তিনি জানান, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গী বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা মোতায়েন বজায় রাখবে ভারতের সামরিক বাহিনী।
কাশ্মীরের ভারতীয় অংশের রাজনীতিবিদরা বলেছেন, তারা যুদ্ধবিরতিতে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কী ভাবছে বহির্বিশ্ব?
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি আনার জন্য এটা একটা বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর দুই দেশই সংঘর্ষ কমিয়ে আনবে ও যোগাযোগ বাড়াবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী। একইসাথে এলওসি অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঘটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মুখপাত্র নাবিলা মাশরালি বলেছেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিবস্থার জন্যে এ যুদ্ধবিরতি খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছে, ইউএই’র সাথে ভারত ও পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সংযোগ আছে। আমরা এই চুক্তির জন্য দুই দেশের চেষ্টার প্রশংসা করছি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২২০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ