২০২৫ সালের ৭ মে, দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে ঘটে যাওয়া এক নাটকীয় সংঘর্ষ আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি কাড়ে। কাশ্মীরের পেহেলগামে এক আত্মঘাতী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাধে এক অভূতপূর্ব আকাশযুদ্ধ। যদিও ভারত সরকার এই ঘটনাকে তখন তেমনভাবে প্রচার করেনি, রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে এমন এক চিত্র, যা শুধু যুদ্ধপ্রযুক্তি নয়, গোয়েন্দা ব্যর্থতা, কৌশলগত দক্ষতা, ও আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতার বহু জটিল স্তর উন্মোচন করে।
এই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ভারতের বহুল প্রশংসিত রাফাল যুদ্ধবিমান এবং পাকিস্তানের হাতে থাকা চীনা প্রযুক্তিতে তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের মাল্টিরোল ফাইটার জে-১০সি। যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে ভারতীয় পাইলটরা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন—তাঁরা নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন, শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের বাইরে। এই আত্মবিশ্বাসের পেছনে ছিল একটি ভুল গোয়েন্দা তথ্য—ভারতীয় গোয়েন্দারা ধারণা করেছিলেন, চীনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ১৫০ কিলোমিটারের বেশি নয়। বাস্তবে তা ২০০ কিলোমিটারের বেশি, যা পাকিস্তানের জে-১০সি যুদ্ধবিমানকে এই দূরত্ব থেকেই ভারতের রাফাল লক্ষ্য করে সফলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম করে।
এই আঘাতে এক রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়, যদিও ভারত সরকার এই ঘটনাকে স্বীকার করেনি। তবে ফরাসি বিমানবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং দাসাল্ট এভিয়েশনের এক নির্বাহী রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন, একটি রাফাল সত্যিই হারিয়েছে ভারত। এই ঘটনার পর পশ্চিমা বিশ্বে আলোচনার ঝড় ওঠে—ফ্রান্সের উন্নত প্রযুক্তি কি চীনের তুলনায় দুর্বল? কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সরাসরি প্রযুক্তির লড়াই নয়, বরং গোয়েন্দা ব্যর্থতা বনাম সমন্বিত সামরিক কৌশলের জয়-পরাজয়।
পাকিস্তান এই যুদ্ধে যে সামরিক কৌশল প্রয়োগ করে, তা ‘কিল চেইন’ নামে পরিচিত। এটি এমন এক সমন্বিত ব্যবস্থা, যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রের নানা স্তরের সেন্সর, ডেটা লিংক, নজরদারি প্ল্যাটফর্ম এবং অস্ত্রের মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়। পাকিস্তান তাদের ‘মাল্টি ডোমেইন অপারেশন’ এর মাধ্যমে ভূমি, আকাশ ও মহাকাশের বিভিন্ন সেন্সরকে একত্রিত করে একটি কেন্দ্রীয় ডেটা লিংকে যুক্ত করতে পেরেছিল, যার ফলে জে-১০সি বিমানের পাইলট রাডার বন্ধ রেখেও শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। এই ডেটা লিংকের নাম ‘ডেটা লিংক-১৭’, যা পাকিস্তান নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে এবং চীনা যুদ্ধবিমান ও সুইডিশ নজরদারি বিমানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম।
এই সমন্বিত কৌশলের ফলে পাকিস্তান শুধু শত্রু সনাক্তকরণে নয়, আক্রমণের ক্ষেত্রে সময়ের ব্যবধান কমিয়ে এনে একটি নিখুঁত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়। চীনের পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ছোড়া হয় প্রায় ২০০ কিমি দূর থেকে, যা প্রযুক্তিগতভাবে এক অভাবনীয় অর্জন। যুদ্ধক্ষেত্রে এত দূর থেকে সফলভাবে শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ঘটনা আধুনিক যুদ্ধ ইতিহাসে বিরল। ব্রিটিশ সাবেক এয়ার মার্শাল গ্রেগ ব্যাগওয়েল এই প্রসঙ্গে বলেন, বিজয়ীর আসনে বসে সেই পক্ষ, যাদের ‘সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস’ বা বাস্তব সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা বেশি পরিপূর্ণ থাকে।
এই যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ভারতের ভেতরেও বড় রকমের কৌশলগত পরিবর্তন দেখা যায়। ভারত তাদের স্থলভিত্তিক ও নৌঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় পাল্টা আঘাত হানে। ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সফলভাবে আঘাত হানে। এই পাল্টা হামলা যেমন ভারতের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখা হয়, তেমনি চীনা ও পাকিস্তানি সামরিক জোটের প্রতি এক সতর্কবার্তা হিসেবেও কাজ করে।
তবে এখানেই বিতর্কের সূচনা। ভারত সরকার অভিযোগ তোলে যে, পাকিস্তান সরাসরি চীন থেকে রিয়েল-টাইম তথ্য বা ‘লাইভ ইনপুট’ পেয়েছে, যা পাকিস্তানের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে, কিন্তু চীনা এয়ার চিফ ওয়াং গ্যাংয়ের সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফর এবং মাল্টি ডোমেইন অপারেশনের প্রতি তাঁর আগ্রহ এই দাবিকে অস্বীকার করলেও প্রশ্ন তৈরি করে। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের আগ্রহের পেছনে রয়েছে এই যুদ্ধক্ষেত্রকে এক পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাই করার উদ্দেশ্য।
এই ঘটনা শুধু ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের আরেকটি অধ্যায় নয়, বরং এটি আধুনিক যুদ্ধকৌশল ও প্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। যুদ্ধের ময়দানে এখন আর শুধু অস্ত্রের ক্ষমতা নয়, তথ্যের গতি, সমন্বয়ের দক্ষতা, এবং সেন্সরভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণই হয়ে উঠছে মূল শক্তি। ৭ মে’র এই সংঘর্ষ সেই সত্যটিকেই আরও গভীরভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করে।
রাফাল যুদ্ধবিমান তার দক্ষতা প্রমাণ করেছে আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ পর্যন্ত। কিন্তু পাকিস্তানের হাতে থাকা জে-১০সি ও তার সাপোর্ট সিস্টেম প্রমাণ করেছে, সঠিক প্রযুক্তিগত সমন্বয় না থাকলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি যুদ্ধবিমানও এক মুহূর্তেই মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। ফলে এই আকাশযুদ্ধ ভবিষ্যৎ যুদ্ধনীতি ও বিমান প্রযুক্তির মূল্যায়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এতদিন ভারতের মনে ছিল, তাদের রাফাল হলো এশিয়ার আকাশের রাজা। কিন্তু এক পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল প্রয়োগ সেই আত্মবিশ্বাসে বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। পাকিস্তান এই ঘটনাকে শুধু কৌশলগত জয় নয়, রাজনৈতিক কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করেছে। চীনের সঙ্গে তাদের যৌথ সামরিক চুক্তি ও প্রযুক্তি বিনিময়ের অগ্রগতি এই জয়কে আরও অর্থবহ করে তুলেছে।
এই আকাশযুদ্ধ প্রমাণ করেছে, ২১ শতকের যুদ্ধ আর আগের মতো কেবল যুদ্ধবিমান আর বোমার লড়াই নয়। এখন এটি একটি তথ্যনির্ভর, রিয়েল-টাইম বিশ্লেষণ নির্ভর এবং জটিল প্রযুক্তি সংযুক্ত কৌশলের যুদ্ধ। এ লড়াইয়ে কে জিতবে তা নির্ভর করে তাদের ওপর, যারা শুধু অস্ত্র বানাতে পারে না, বরং সেগুলোকে সময়মতো এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ