খুলনা মহানগর গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক নাহিদ হাসান মৃধার বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের ওই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার(০৯ মার্চ) রাতে নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন তার স্ত্রী আঁখিমুনা। খালিশপুর থানার ওসি কাজী মোস্তাক আহমেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক সাড়ে তিন লাখ টাকা দেনমোহরে বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান পাইকের মেয়ে আঁখিমুনার সঙ্গে মোড়েলগঞ্জ উপজেলার শ্রেণিখালী গ্রামের কাদের মৃধার ছেলে নাহিদ হাসান মৃধার বিয়ে হয়। বিভিন্ন সময় পিত্রালয় থেকে সাত লাখ টাকা দেওয়া হয় নাহিদ হাসানকে। তার পরও যৌতুকের দাবিতে তাকে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে আসছেন তিনি।
যৌতুকের দাবি পূরণ করতে গিয়ে ওই গৃহবধূর বাবা তার সংসারের সব কিছুই দিয়েছেন। সম্প্রতি জমি ক্রয়ের জন্য ১৪ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে প্রতিনিয়ত মারপিট করেন তার স্বামী নাহিদ হাসান মৃধা।
গত ১ মার্চ রাতে যৌতুকের জন্য মারপিট করার একপর্যায়ে চাকু নিয়ে তাকে খুন করতে যায়। এ সময় গৃহবধূ অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তার মা উদ্ধার করে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে।
মুনার বাবা মনিরুজ্জামান পাইক বলেন, মেয়ের সুখের কথা ভেবে জামাইয়ের সব আবদার পূরণ করেছি। এখন আবার ১৪ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে প্রতিনিয়ত মারপিট করছে মেয়েকে। ১ মার্চ মারপিট করে এবং খুন করার হুমকি দেয়। আমার মেয়ে ২ মার্চ পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে এবং ৩ মার্চ সরাসরি কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করে। কমিশনার তার শারীরিক অবস্থা দেখে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী মেয়ে হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি আছে। ওসিসির মাধ্যমে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।
অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খালিশপুর থানায় গেলে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নাহিদ। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সামনেই নাহিদ এমন আচরণ করেন।
এ ঘটনায় যৌতুকলোভী স্বামীর অত্যাচার থেকে রক্ষা ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট আবেদন করেন ভুক্তভোগী আঁখিমুনা। তাদের ঘরে নিহাদ নামের পাঁচ বছরের ছেলেসন্তান রয়েছে।
এর আগে ৭ মার্চ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এর এসআই সফুরা খাতুন খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে পত্র পাঠান।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাক আহমেদ জানান, নগর গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর নাহিদ হাসান মৃধার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) রাতে তার স্ত্রী আঁখিমুনা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন, যার নম্বর-৭। তবে, আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
কদিন আগেও পাবনায় সোহেল রানা নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের মামলায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. শামসুল আলামীন এই রায় ঘোষণা করেন।
তারও আগে বগুরায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দ্বিতীয় স্ত্রীর করা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ইফতেখায়ের গাউসুল আজমকে কারাদণ্ড দেয় আদালত। ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি, নির্যাতন করে হত্যা চেষ্টা ও গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন স্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর এসবের সবকটাই ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, পুলিশে ঢোকার পর স্বাভাবিক একজনের ভেতরেও আশ্চর্য এক পরিবর্তন আসে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত ভেবে তারা যা ইচ্ছা তা করার মানসিকতা নিয়ে দাপটের সাথে চলতে থাকেন। ফলে ঘর থেকে বাহির কেউ তাদের কুৎসিত হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসার হয়েও যৌতুক দাবি, নারী নির্যাতন করা আমাদের সমাজের এক চরম দুর্দশার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন আরও অসংখ্য অভিযোগ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, নারী নিপীড়ন-নির্যাতন বন্ধে পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ। পুলিশদের দ্বারাই এখন নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোথাও পুলিশ ধর্ষক, নারী নির্যাতক, আবার কোথাও নিপীড়কের সহযোগী। এ থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশ বাহিনীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের কড়া নজরদারিও দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৮
আপনার মতামত জানানঃ