ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় মামলায় সাফায়েত গনি (২৮) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পঞ্চম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজিব আহমেদ তালুকদার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার (২৫ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে সাফায়েত গনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ কনস্টেবল সাফায়েত গনি জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার কুমারগাথা ইউনিয়নের মৃত ছোহরাব আলীর ছেলে। ২০১৫ সালে তিনি পুলিশে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলে দায়িত্বরত আছেন।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিদর্শক ঝুটন কুমার বর্মণ বলেন, ‘অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় ফুলবাড়িয়া থানা-পুলিশ কনস্টেবল সাফায়েত গনিকে আদালতে তুলে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে বিচারক শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’
ফুলবাড়িয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহীন মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী ইব্রাহিম খলিল (২৪) ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের চৌধার গ্রামের বাসিন্দা। গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) ইব্রাহিদ খলিল ফুলবাড়িয়া বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে পুলিশের পোশাক পরে অন্তত ৪ থেকে ৫ জন মিলে তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
ওই সময় ইব্রাহিমের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অপহরণকারীরা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দেন। এরপর ইব্রাহিমের সঙ্গে থাকা ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেন।
এই ঘটনায় গতকাল সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগী ইব্রাহিমের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় পুলিশ কনস্টেবল সাফায়েত গনিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো হয় বলে জানান এসআই।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, ‘অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার সাফায়েত গনি একজন পুলিশ কনস্টেবল। যেহেতু তার বিরুদ্ধে অপরাধের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও পুলিশের সব ইউনিট প্রধানের কাছে প্রতিনিয়ত এমন বিষয়ে অভিযোগ আসছে। গত সাড়ে ৪ বছরে ৬১ হাজারের বেশি অভিযোগ এসেছে বলে সদর দপ্তর সূত্র জানায়। ২০১৭ সালের ১৩ই নভেম্বর সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক আইজিপি কমপ্লেইন সেল চালু করার পর থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি আসছে।
এসব অভিযোগ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশের অপরাধ রুখতে প্রতিটি জেলায় গোয়েন্দাদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা পুলিশ সুপাররা টিম গঠন করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত চার বছরে বিভিন্ন অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ৬৫ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গড়ে মাসে ১৩৫৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতিবছরই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে। ২০১৮ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জনের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে। পরের বছর এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫১২। ২০২০ সালে আরও বেড়ে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২১২। গত বছর ১৬ হাজার ৪১৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শাস্তি পাওয়া পুলিশের সংখ্যা ১০ হাজার ৪২১ জন। ২০১৬ সালে ১৩ হাজার ৫৮৬, ২০১৫ সালে ১১ হাজার ১৬৭, ২০১৪ সালে ১৫ হাজার ২৯৭, ২০১৩ সালে ১৪ হাজার ৬০ এবং ২০১২ সালে ১২ হাজার ৯৯২ জন পুলিশ সদস্য অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন। এর মধ্যে চাকরিচ্যুতি বা বরখাস্ত হয়েছে ৫০৬ জন। বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে ৩৬ জনকে।
এসডব্লিউএসএস/২১৩৬
আপনার মতামত জানানঃ