ভোট নিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে হুমকি ধামকি। নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মাঝে প্রচার প্রচারণা নিয়ে বিভিন্ন গলাবাজি ও বাকযুদ্ধ ইত্যাদি থাকলেও এবারের পৌরসভা নির্বাচনে এসবের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন হুমকি ধামকি চলছে। সরকার দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা কোনো রাখঢাক ছাড়াই ভোটের জন্য প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। নৌকায় প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি ভোট না দেওয়ার ফলে বাড়ি ছাড়া করার হুমকিও দিচ্ছে। প্রকাশ্যে এমনি হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম।
গত বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ওই নির্বাচনী সভায় সবাইকে নৌকায় ভোট দেয়ার কথা বলেন মাহমুদা বেগম। এ সময় তিনি বলেন, ধানের শীষে (বিএনপির প্রতীক) যাদের প্রেম, তারা ১৩ তারিখ (১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট) ঠাকুরগাঁও ছেড়ে যাবেন।
ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে ধানের শীষের ভোটারদের দেখতে চান না উল্লেখ করে মাহমুদা বলেন, ভোটকেন্দ্রে তাদের আসার দরকার নেই। ভোটকেন্দ্রে যাবে শুধু নৌকা, নৌকা আর নৌকা।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও সদর পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন আঞ্জুমান আরা বেগম। তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। গত কয়েকদিন ধরে আঞ্জুমানের পক্ষে প্রচারণায় চালাচ্ছেন সংগঠনটির সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সম্পাদক মাহমুদা বেগম। তাদের সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেত্রীরাও।
এর আগে বুধবার আরেক পথসভায় মাহমুদা বলেন, ‘সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা নৌকায় ভোট দিতে না চান, ১৩ তারিখ সন্ধ্যার পরে আপনাদের চেহারা এলাকায় দেখতে চাই না। কোথায় যাবেন আমি জানি না। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে থাকতে পারবেন না। যারা নৌকায় ভোট না দেবেন, তারা ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেবেন।’
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, ‘একদম পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, খাইদাই আমি জব্বারের, গান সালামেরটা গাইব না। কালকে থেকে রাস্তায় কোনো ধানের শীষের পোস্টার আমরা দেখতে চাই না। ধান বলে কোনো কথা নাই। ধানের শীষ বলে কোনো কথা নাই। আমরা শুধু দেখতে চাই নৌকা আর নৌকা। যদি ধান থাকে, তবে ধরে নেব এখানে আওয়ামী লীগ নাই।’
বক্তব্যের বিষয়ে মাহমুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘পৌরসভায় ধানের শীষের ভোট তলানিতে ঠেকেছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে মাহমুদা আপার বক্তব্য এডিট করে বিএনপির লোকজন ছড়িয়ে দিতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোথাও এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন না।’
ধানের শীষের প্রার্থী শরিফুল ইসলামের অভিযোগ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন প্রকাশ্য বক্তব্যের পর ধানের শীষের কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। সাধারণ ভোটাররাও এতে শঙ্কিত। ভোটারদের হুমকি দেওয়ার ভিডিওর সিডিসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হচ্ছে।
এদিকে আজ শনিবার(১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমের বক্তব্যের অডিও ও ভিডিও পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এ নিয়ে প্রকৃত তথ্য জানতে তার (মাহমুদা) সঙ্গে কথা হয়েছে।
কাদের বলেন, কোনো অরাজনৈতিক বক্তব্য যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, যার যার খুশিমতো বক্তব্য কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না আওয়ামী লীগ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এবারের পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সরকারদলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল, ভোট চুরি করার কৌশল, নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়ার হুমকি প্রকাশ্যেই দিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের সার্বিক এক পরিস্থিতি উঠে আসে। দেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র যে সঠিক প্রক্রিয়ায় আগাচ্ছে না তারই নমুনা হিসাবে এসব তুলে ধরতে চান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, কেবল ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনেই নয়, কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভা, রাজশাহীর তানোরের মুণ্ডমালা পৌরসভা, মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভা, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌরসভা, লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনসহ আরো অনেক স্থানেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা, আগের রাতেই ভোট দিয়ে ফেলার অভিযোগসহ ভোট না দিলে রাতে ঘুমাতে না দেওয়ার হুমকি, ভোট না দিতে ঘর থেকে বের না হওয়ার হুমকিসহ আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। সরকারদলীয় নেতাদের এমন ভোট চুরি করার কৌশল আর ভোট না দিলে হুমকি দেওয়ার ফলে দেশে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৮
আপনার মতামত জানানঃ