বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে দেশের সকল মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করা আছে। কেউ দ্বিতীয়বার ভোটার হতে গেলে মুহুর্তেই তা ধরা পড়ার কথা। ২০০৮ সাল থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৮০৬ জন দ্বৈত ভোটার হয়েছেন বলে চিহ্নিত হয়েছে। তাদের সবারই দু’টি করে জাতীয় পরিচয় পত্র আছে বলে জানা গেছে নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্রমতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, যারা দুটি করে পরিচয়পত্র নিয়েছেন, তাদের বেশির ভাগেরই পরিচয়পত্র অকার্যকর (লক) করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের অনেকে হয়তো না বুঝে দুবার দুই জায়গায় ভোটার হয়েছেন। আবার অনেকে দুই জায়গায় নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ ভিন্ন ভিন্ন দিয়েছেন—তারা অবৈধ সুবিধা নেওয়ার জন্য এমনটি করেছেন। এখন পর্যন্ত এ রকম ১ হাজার ৫৭ জন চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইসি।
ভোটার তালিকা আইন এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, একাধিকবার ভোটার হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া বা তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধে জেল–জরিমানার বিধান আছে। আবার কোনো নিবন্ধন কর্মকর্তা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া, দায়িত্বে অবহেলা করে কোনো কাজ বা ইচ্ছাকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য দোষী হলে তারও জেল–জরিমানার বিধান রয়েছে।
দ্বৈত ভোটারের বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা জানান, একজন ব্যক্তির ভোটার হতে হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের বাইরে এখন ১০ আঙুলের ছাপ এবং আইরিশ (চোখের মণির ছাপ) দিতে হয়। শুরুর দিকে দুই হাতের চার আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়েছিল। আঙুলের ছাপ ইতিমধ্যে ইসির সার্ভারে আছে কি না, তা ক্রস ম্যাচ (যাচাই) করা হয়। এ কাজ কেন্দ্রীয় সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে থাকে। ইসির সার্ভারে থাকা ছাপের সঙ্গে কোনো ছাপ না মিললে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ পরিচয়পত্র করার অনুমোদন দেয়।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের কাজ শেষ করার আগেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতি করে দ্বিতীয়বার জাল পরিচয়পত্র পেতে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের যোগসাজশেও অনেকে নিজের আঙুলের ছাপ ব্যবহার না করে অন্য কারও ছাপ ব্যবহার করেন। অথবা যে ছয়টি আঙুলের ছাপ আগে নেওয়া হয়নি, শুধু সেগুলো নিয়ে থাকেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় সার্ভারে থাকা আঙুলের ছাপের সঙ্গে এই ছাপ মেলে না।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ২০০৫–০৬ সালে এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে ভোটার তালিকায় এক কোটির বেশি ভুয়া ভোটার ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করা হয়। বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজ খতিয়ে দেখে বলেছে, এই তালিকা প্রায় নির্ভুল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ৫ লাখের বেশি দ্বৈত ভোটার। এটা অবিশ্বাস্য। নির্ভরযোগ্য ভোটার তালিকাকেও তারা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইন অনুযায়ী দ্বৈত ভোটার হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে জেল, জরিমানা করার বিধান রয়েছে। ভুয়া তথ্য দিয়ে ব্যাংকঋণ নেওয়া, অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ; অনৈতিকভাবে অন্যের পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করাসহ নানা অবৈধ সুবিধা নিতে অনেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র করে থাকেন। আর ভোটার হওয়ার মাধ্যমেই এই পরিচপয়পত্র পাওয়া যায়। এর দায় ইসি এড়াতে পারে না। তাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এটি হয়েছে। তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৪২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ