ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য সহযোগিতা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সহায়তা সংস্থায় (ইউএনআরডব্লিউএ) আমিরাত ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতিবছর ৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার অনুদান দিলেও ২০২০ সালে তা বিপুল কমিয়ে দিয়েছে। আমিরাতের এই ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েলের চ্যানেল-১২ টেলিভিশন জানিয়েছে, জাতিসংঘের সংস্থায় বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেননি কাতারের কর্মকর্তারা। পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশ বাহরাইনে একইভাবে ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি চ্যানেল টুয়েলভ।
শুক্রবার ইউএনআরডব্লিউএ’র মুখপাত্র সামি মাসাশা জানান, ২০২০ আমিরাত মাত্র ১০ লাখ ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। তবে ২০২১ সালে আবারও আগের বছরগুলোর মতো অনুদান দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া ৫৭ লাখ নিবন্ধিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে ইউএনআরডব্লিউএ। সংস্থাটির অন্যতম দাতা দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে আমিরাত। ইসরাইলের সঙ্গে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘটনাকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে তার কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের জনগণ।
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ইসরাইল ও আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। গতবছরই সংযুক্ত আরব আমিরাত একমাত্র মুসলিম দেশ হিসেবে ভিসা মওকুফের চুক্তি করে ইসরাইলের সঙ্গে। ইসরাইলের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই রাষ্ট্রটিতে ভ্রমণ করতে পারবেন। যদিও করোনাভাইরাসের কারণে ইসরাইলের সঙ্গে ভিসামুক্ত চুক্তি স্থগিত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইসরাইলের সঙ্গে ভিসামুক্ত চুক্তি আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। স্থগিত হওয়া তারিখের আগ পর্যন্ত ইসরাইলি নাগরিকরা ভ্রমণের জন্য আগের মতো এন্টি ভিসা নিতে পারবেন। পাশাপাশি আরব আমিরাতের নাগরিকদের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে। গত কয়েক সপ্তাহে হাজার হাজার ইসরাইলিরা আরব আমিরাত ভ্রমণ করেছে। ইসরাইল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয়েই পারস্পরিক সম্মতিতে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের অংশ হিসেবে দুই দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত সুবিধা দিয়েছে।
সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তিটি প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে ফিলিস্তিনিরা। তারা বলছে, চুক্তিটির মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিরা আরও একবার বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হলো। তারা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’কে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেই নিন্দা করছেন। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে আরবদের মধ্যকার ঐক্য ভেঙে পড়ল। অথচ আরব বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি করেছে ইসরায়েল। আর ফিলিস্তিনিরা এখনো পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে অধিকৃত অবস্থায় আছে, যা গাজার মতোই একটি উন্মুক্ত কারাগারের শামিল।
এর আগে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা সব ধরনের অনুদান দেয়া বন্ধ করে দেয় তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন। ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং ফিলিস্তিনকে একঘরে করে দেয়ার জন্য সে সময় নজিরবিহীন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা ফিলিস্তিনিদের জন্য আবারও সহায়তা চালু করবে। একই সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়ে পুণরায় কাজ করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ