১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি হলেও ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয় দাবি করে। তবে এর বাইরেও এক অদৃশ্য যুদ্ধ চলতে থাকে—বয়ানের যুদ্ধ, যেখানে অস্ত্র নয়, ভাষা ছিল প্রধান হাতিয়ার। সামরিক সংঘাতের বাইরেও দুই দেশ এমন এক কাহিনি নির্মাণ করে, যা তাদের নৈতিক অবস্থানকে জোরদার করে তোলে এবং নিজেদের আত্মরক্ষাকারী হিসেবে তুলে ধরে।
ভারত তাদের অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে ঘোষণা করে। গণমাধ্যমে একে আত্মরক্ষার যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। বলা হয়, ২৫ মিনিটে ২৪টি হামলা চালিয়ে তারা ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ধ্বংস করেছে, যেখানে কোনো বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেনি। এই হামলা পেহেলগামে ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যুর জবাব বলে দাবি করা হয়। ভারতীয় সরকার ও মিডিয়া একত্রে একটি দৃঢ় ও নৈতিক অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করে—ভারত শান্তিপ্রিয়, তবে জবাব দিতে জানে।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ান আল–মারসুস’, যার মানে লোহার প্রাচীর। এর মাধ্যমে পাকিস্তান একটি প্রতিরক্ষামূলক এবং ধর্মীয় কাহিনি নির্মাণ করে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের হামলা ছিল যুদ্ধাপরাধ, যেখানে মসজিদে হামলা এবং বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তানি গণমাধ্যমের প্রচারে শহীদদের স্মরণ করা হয়, এবং দেশপ্রেমের আবেগ ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এই হামলাকে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের প্রতিশোধ বলে ঘোষণা দেন।
এই সংঘর্ষে একটি দিক খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে—উভয় পক্ষই নিজেকে মজলুম ও আত্মরক্ষাকারী হিসেবে তুলে ধরে। ভারত পাকিস্তানকে এক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিত্রায়িত করে, আর পাকিস্তান ভারতকে একটি ফ্যাসিবাদী, মুসলিমবিদ্বেষী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করে। দুই দেশের গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ভাষা ও কাহিনি তৈরি ছিল উদ্দেশ্যমূলক, যেন নিজ নিজ জাতিকে ন্যায়ের পক্ষের যোদ্ধা হিসেবে চিত্রিত করা যায়।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুদ্ধের প্রকৃত সত্য প্রায় আড়াল হয়ে যায়। বাস্তব সংঘাত যেমন ভয়াবহ, তার চেয়েও ভয়ানক হয়ে ওঠে তথ্য ও ভাষার বিকৃতি। আধুনিক যুগে যুদ্ধ শুধু সীমান্তে নয়, লড়াই চলে টেলিভিশনের পর্দায়, পত্রিকার শিরোনামে, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যে যার মতো করে ইতিহাস লেখে, আর কাহিনি তৈরি করে নিজেদের পক্ষের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে।
আপনার মতামত জানানঃ