বিজ্ঞানীরা একটি চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছেন যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের ৭০০ কিলোমিটার নীচে একটি বিশাল মহাসাগর রয়েছে। বিজ্ঞানীদের এই উদ্ঘাটন শুনলে মনে হয় একটি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাসের গল্প কারণ বিখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক জুলস ভার্ন তার একটি উপন্যাসে এ ধারণাও উপস্থাপন করেছিলেন যে, পৃথিবীর ভিতরে লুকিয়ে আছে একটি মহাসাগর।
পৃথিবীতে পানির উপস্থিতির ইতিহাস জানার অনুসন্ধান গবেষকদের চমকপ্রদ সত্যের দিকে নিয়ে গেছে যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের ৭০০ কিলোমিটার নীচেও একটি বিশাল মহাসাগর রয়েছে।
গবেষকদের মতে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের ৭০০ কিলোমিটার নীচে, মহাসাগরটি রিংউডাইট নামক একটি নীল পাথরের ভিতরে লুকিয়ে আছে, যা পৃথিবীর জল কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে আমাদের বোঝাকে আরও বিভ্রান্ত করে।
গবেষকরা বলেছেন, এ ভূগর্ভস্থ মহাসাগরের আয়তন এতটাই বিশাল যে, এটি পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরের মোট আয়তনের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
আবিষ্কারটি পৃথিবীর পানিচক্র সম্পর্কে একটি নতুন তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে, যথা যে পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগর পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে লুকানো সমুদ্রের পানি থেকে গঠিত হতে পারে।
ইলিনয়ের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং এই গবেষণার প্রধান স্টিভেন জ্যাকবসন বলেছেন যে, এই নতুন আবিষ্কারটি শক্ত প্রমাণ যে, পৃথিবীর পৃষ্ঠের পানি তার অভ্যন্তর থেকে এসেছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে লুকিয়ে থাকা এ মহাসাগরটি ব্যাখ্যা করতে পারে, কেন বিশ্বের মহাসাগর লাখ লাখ বছর ধরে একই আকার রয়ে গেছে।
এদিকে, ভারত মহাসাগরের তলদেশে পাওয়া গেছে এক সুবিশাল গর্ত। যার বিস্তৃতি প্রায় ৩০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। আর এটাই এখন রহস্যের উদ্রেক করছে। বিজ্ঞানীদের মনে জাগছে অপরিসীম কৌতূহল- বিষয়টা ঠিক কী!
শোনা যাচ্ছে মহাসাগরের তলদেশে বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি হওয়া গর্তটি আসলে গ্র্যাভিটি হোল অর্থাৎ মাধ্যাকর্ষণজাত গর্ত। যেখানে পৃথিবীর অভিকর্ষ বল অস্বাভাবিক রকম দুর্বল। আর সবথেকে বড় কথা হল, এর জেরে বসে যাচ্ছে সমুদ্রতল। ফলে এটা বিশ্বের অন্যতম রহস্যজনক স্থানের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে।
বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের দুই বিজ্ঞানী দেবাঞ্জন পাল এবং আত্রেয়ী ঘোষ এই সংক্রান্ত একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। যা এই রহস্যময় বিষয়টির উপর আলোকপাত করছে। তাঁদের দাবি, পৃথিবীর ভূত্বকের নিচে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার (প্রায় ৬২১ মাইল) জুড়ে একটি অত্যন্ত শীতল এবং গভীর এলাকা রয়েছে। এটা আসলে প্রাচীন মহাসাগরের অবশিষ্টাংশ। যা প্রায় ৩ কোটি বছর আগে আফ্রিকার নীচে আটকে রয়েছে। এই গোটা প্রক্রিয়ার জেরে রাশি রাশি গলিত শিলা উত্থিত হয়। যার ফলে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অগ্ন্যুৎপাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
এই জটিল ধাঁধার সমাধানে বিজ্ঞানী দেবাঞ্জন পাল এবং আত্রেয়ী ঘোষ অনেক গবেষণা চালিয়েছেন। বিগত ১৪০ মিলিয়ন বছর ধরে কীভাবে পৃথিবীর টেকটনিক প্লেট চলাচল করে চলেছে, এই বিষয় নিয়েই মূলত ছিল তাঁদের পড়াশোনা। তাঁরা কিছু সিম্যুলেশন চালান এবং সেগুলোকে জলের নিচের গর্তের সঙ্গে তুলনা করেন। যাকে আমরা গ্র্যাভিটি হোল বলি। সেই সব সিম্যুলেশনের সঙ্গে ভারত মহাসাগরের গ্র্যাভিটি হোলের মিল পাওয়া গিয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই একটা বিষয় সাধারণ ছিল। আর সেটা হল প্রচুর পরিমাণ গরম ম্যাগমা এবং ম্যান্টল স্তরের নিচে থাকা একটি বিশেষ গঠন।
গবেষকদের মতে, গন্ডোয়ানা থেকে ভারতীয় প্লেট ভেঙে যাওয়ার পর তার সংঘর্ষ হয় ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে। যার ফলে এটি টেথিস প্লেটের উপর দিয়ে চলে যায়। যেহেতু বর্তমান কালের পূর্ব আফ্রিকার কাছে এর ম্যান্টল রয়েছে, ফলে প্রাচীন টেথিস মহাসাগরের টুকরো টুকরো অংশগুলি ধীরে ধীরে ম্যান্টলের নিচের দিকে ডুবে যেতে থাকে। শেষে ২০ মিলিয়ন বছর আগে প্লিউম তৈরি করার জন্য ম্যাগমাকে স্থানচ্যুত করে ডুবন্ত টেথিয়ান প্লেট।
আপনার মতামত জানানঃ