প্রতি মাসে বিমান বাংলাদেশকে ৫০ কোটি টাকার জেট ফুয়েল সরবরাহ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল। লোকসানের কারণ দেখিয়ে গত আট বছর ধরে এই ফুয়েলের কোনো টাকা পরিশোধ করেনি বিমান। প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া না মেটানোয় ঋণের টাকায় ফুয়েল সরবরাহকারী পদ্মা অয়েলও লোকসানে থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ গুনছে।এমতাবস্থায় আবারো বকেয়ার কবলে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ। যদিও ঋণের বোঝা নিয়েও বিমান বাংলাদেশের লাভ হয় বলে প্রচার রয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত আট বছরে বিমান বাংলাদেশ বিপিসি থেকে যে পরিমান জেট ফুয়েল ব্যববহার করেছে তার একটি টাকাও পরিশোধ করেনি। গত কয়েক বছরে একাধিকবার পাওনা টাকা আদায়ে আলোচনা করেও কোনো লাভ হয়নি। জানা যায়, বিমানের কাছে এ পর্যন্ত বিপিসির জেট ফুয়েল বাবদ পাওনা ২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। এখন নতুন করে আরও ৩৯ কোটি টাকার জ্বালানি তেল বাকিতে নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ। সমস্যা সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকার আহবান করে চিঠি দিতে যাচ্ছে বিপিসি।
এ বিষয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান জানান, আগের পাওনা নিয়ে আলোচনা আগে থেকেই চলছে। যেহেতু সরকারি কোম্পানি, আমরা তাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাইছিলাম। এখন আবার নতুন করে বাকি পড়েছে। বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণত হজের মৌসুমে তারা তাদের সব পাওনা পরিশোধ করে দেয়। এবার যেহেতু হজ হয়নি, তাই পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে। তিনি জানান, এজন্য আমরা জ্বালানি বিভাগের কাছে চিঠি দিচ্ছি। একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিমানের বকেয়া অনাদায়ী থাকায় ব্যাংক ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছিল পদ্মা অয়েলকে। কারণ দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা অয়েল বিদেশ থেকে তেল কিনে থাকে। নির্ধারিত সময়ে বিমান থেকে টাকা না পাওয়ায় তাদেরকে বড় অংকের সুদ দিতে হচ্ছিল। এই অবস্থায় চিঠির পর চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে বকেয়া পরিশোধে করণীয় নির্ধারণে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক বসে। জ্বালানি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবগণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- এখন থেকে নিয়মিত জেট ফুয়েল ক্রয়ের বিল পরিশোধের পাশাপাশি পূর্বের বকেয়া বিলও ধীরে ধীরে পরিশোধ করবে বিমান।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এক অর্থবছরে শত কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে বলে ঘোষণা দিলেও জ্বালানি তেল কেনার বিপরীতে আরেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হাজারও কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করছে না। এমনকি প্রতি মাসের বিলের টাকা পরিশোধে নতুন করে যে চুক্তি হয়েছে গত মাসে, সেই চুক্তিরও তোয়াক্কা করছে না। দীর্ঘদিন ধরে দেনদরবার করেও পাওনা আদায় করা সম্ভব না হওয়ায় পদ্মা কর্তৃপক্ষ জ্বালানি বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়েছে, আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকের আয়োজন করে যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনার কারণে লোকসান দেখালেও তারা গত বছর লাভ করেছে বলে প্রচার করে। বিপুল পরিমাণ বকেয়া রেখে তারা এটি কিভাবে করতে পারে এ নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। লাভ হলেও কিভাবে ঋণ বাড়ে এবিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন যে, বিমান বাংলাদেশে অনিয়মের ঘটনা না ঘটে থাকলে এমন হবার কথা নয়। দুটোই রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠান। ফলে অনিয়ম বা দুর্নীতির মত ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে মনে করেন তারা। আর এতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। পেট্রোবাংলা বা পদ্মা অয়েলকে ক্ষতির মুখে ফেলে বিশেষ কোনো শ্রেণি লাভবান হচ্ছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করতেন তারা। এদিকে বিমানের সেবা নিয়েও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কের জন্ম দিয়ে আসছে। বিমানের টিকিট বিক্রির অনিয়মের খবরও বেশ পুরনো। এসব ক্ষেত্রে বিমানে আরো তদারকি করার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ১৪৫৪
আপনার মতামত জানানঃ