
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২৮ আগস্ট) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শনিবার রাতে নিউমার্কেট থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর তাকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এসময় আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারায় মামলা করেন। মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কোবরা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ারকে আসামি করা হয়। মামলায় আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটানোর জন্য আক্রমণাত্মক ও মানহানিকর তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার ও প্রচারে সহায়তার অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৭ জুলাই সাইবার ট্রাইব্যুনাল এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসামিকে হাজির করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষ জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর মেজর দেলোয়ার হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ ওয়াজ লাইভ’ শিরোনামে এক ভিডিও দেখতে পান পুলিশের উপপরিদর্শক খাইরুল ইসলাম। সেখানে সঞ্চালক খাদিজাতুল কুবরার উপস্থাপনায় মেজর দেলোয়ার হোসেন (অব.) তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারকে নিয়ে কথা বলেন।
এছাড়া তারা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছেন বলে কথিত অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। তাই আসামিরা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারা লঙ্ঘন করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
এ আইনে প্রতি মাসে গড়ে ৩৪টি মামলায় ৮৬ জনের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক আলী রীয়াজ। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘অন্তহীন দুঃস্বপ্ন-বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৮’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মুখ্য আলোচকের আলোচনায় তিনি এই তথ্য জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নানাভাবে খর্ব হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা কী মানুষের আছে? রাজনৈতিক দলের নেতারাই যদি কথা বলতে না পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কথা বলবে কীভাবে? ডিএসএর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মুক্তভাবে তথ্য, কথা আদান-প্রদানের যে জায়গা ছিল, তা সংকুচিত হয়ে গেছে।
তারা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে— এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ