বাংলাদেশে কোনো পুরুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনার স্ত্রী কী করেন আর তার জবাব যদি হয়, ‘কিছু করেন না’৷ তাহলে কী বুঝবেন? সাধারণত এর মানে, তিনি ঘর-গেরস্থালির কাজ করেন৷ কিন্তু এ দেশে ঘর-গেরস্থালির কাজকে কাজ বলে ধরা হয় না!
নারীর কাজ শুনলেই মনের চোখে ভেসে উঠে পোশাকশ্রমিকদের ছবি। কিন্তু ইট ভাঙা, মাটি কাটা, কৃষিকাজ করা, শিল্প-কারখানায় কাজ করা, শিক্ষকতা করা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, গবেষক, পাইলট, ড্রাইভার, চা দোকানদার থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারী, পুলিশ-আর্মি এমন বহু পেশায় নারীরা আসছেন এগিয়ে। কিন্তু সব পেশায় থেকেও বা কোনো পেশায় না থেকেও যে কাজ তারা নীরবে করে যান তা হলো গৃহস্থালি কাজ। জীবন নিংড়ে নেওয়া এই কাজে না আছে স্বীকৃতি আর না আছে সম্মান।
দেশে নারীদের মজুরিবিহীন গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য নিরূপণ, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। আজ শনিবার(২৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব দাবি করা হয়।
ফোরামের অনান্য দাবিগুলো হলো— স্বামী পরিত্যাক্তা, বয়স্ক ও দুঃস্থ নারীদের জন্য ভাঙা নয়, পুনর্বাসন করতে হবে এবং একে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সরকারিভাবে গ্রাম-শহরে এলাকাভিত্তিক মানসম্পন্ন ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, স্বামী পরিত্যাক্তা দুঃস্থ নারীদের পুনর্বাসন করাসহ নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ, নৈতিক অবস্থান, নারীর অধিকার ও সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে তো বটেই, সামাজিক ন্যায্যতার কারণেও নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দরকার।
সভায় বক্তারা বলেন, গৃহস্থালি কাজ ছাড়া কোনো পরিবার ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। আর গৃহস্থালি কাজের সিংহভাগই করে থাকেন পরিবারের নারী সদস্যরা। গৃহস্থালি কাজ ছাড়া মানুষের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক জীবন বিকশিত হওয়া তো দূরের কথা, টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এ কাজে কোনো স্বীকৃতি নেই, মর্যাদা নেই। এমনকি এ কাজকে সব সময় তাচ্ছিল্য করা হয়।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন গবেষণাপত্রের বরাত দিয়ে বক্তারা বলেন, গবেষণা সংস্থা সানেমের তথ্য অনুযায়ী যদি গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্য হিসাব করা যায়, তাহলে তা দাঁড়াবে নারীর ক্ষেত্রে জিডিপির ৩৯.৫৫ শতাংশ এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ। সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর কাজের ৭৮-৮৭ শতাংশই অর্থনৈতিক হিসাবে আসে না।
মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা দাবি করেন, অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ, নৈতিক অবস্থান, নারীর অধিকার ও সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে তো বটেই, সামাজিক ন্যায্যতার কারণেও নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘরে-বাইরে নারী যে কাজ করে তার পুরোটা হিসাবে আনলে এবং আর্থিক মূল্য বিবেচনা করলে জিডিপিতে নারী-পুরুষের অবদান সমান হবে। তখন আর কেউ বলতে পারবে না যে নারীরা কোনো কাজ করে না। আমরা যখন আধুনিকতার কথা বলতে গিয়ে সব সময় ডিজিটালাইজেশনের কথা বলি তখন অর্থনৈতিক সবকিছুরই তো হিসাব করা সম্ভব। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ, নৈতিক অবস্থান, সামাজিক মর্যাদা, নারীর অধিকার ও সামাজিক মর্যাদার প্রশ্নে তো বটেই সামাজিক ন্যায্যতার কারণেও নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দরকার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৫
আপনার মতামত জানানঃ