বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বে বায়ুদূষণের ফলে মৃত্যু হয় প্রায় ৭০ লাখ মানুষের। ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত মাত্রা ছাড়িয়ে দূষণ হয়, এমন অঞ্চলে বাস বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশের।
শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ অসংখ্য স্বাস্থ্য জটিলতার সঙ্গে বায়ুদূষণের যোগসূত্র পাওয়া যায়।
বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে শুধু ভারতেই। প্রতিবছরই নির্দিষ্ট একটি সময়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আকাশ ছেয়ে থাকে ঘন ধোঁয়াশায়।
গত সপ্তাহে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে দুই কোটি বাসিন্দার শহরটিতে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে বন্ধ রাখা হয় সব স্কুল, যেন তাদের বাড়ির বাইরে বের হতে না হয়।
নয়াদিল্লির বাতাসে ক্ষুদ্র ধাতব কণা, বা পিএম২.৫ পার্টিকেলসের মাত্রা ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৩৪ গুণ বেশি। এই দূষিত কণা মানুষের ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিষাক্ত এ ধোঁয়াশা শীতকালে উদ্বেগজনক রূপ নেয়, কারণ কৃষকদের আগাছা পোড়ানোর সময় এটি।
ভারতের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের ১৫টিই দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। শরৎ ও শীতকালজুড়ে এসব অঞ্চলে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ রূপ নেয়। দেশটিতে বাতাসে পিএম২.৫ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে যানবাহন ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ময়লা পোড়ানোসহ নানা কারণ।
দূষিত শহরের তালিকায় বাংলাদেশ
বিশ্বের দূষিততম ১০০ শহরের তালিকায় রাজধানী ঢাকাসহ রয়েছে বাংলাদেশের চারটি শহর। দূষিত নগরীর সংখ্যার দিক থেকে তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে ভারত; চরম দূষণের শিকার দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিসহ ৪৬টি শহর। ১০৬ দেশের চার হাজার সাত শ’ ৪৪টি শহর পর্যবেক্ষণ করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়।
বাতাসের মান নির্ধারণী আইকিউএয়ারের তথ্য বিবরণী থেকে জানা যায়, বিশ্বের দূষিততম শহর চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের হোতান শহর। আর সবচেয়ে দূষিত ১০টি শহরের মধ্যে বাকি ৯টিই ভারতের, যার শীর্ষে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ। সর্বোচ্চ দূষণে দশম অবস্থানে দিল্লি।
সবচেয়ে দূষিত ১৫টি শহরের মধ্যে নেই বাংলাদেশের কোনো শহর। তবে দূষিততম শত নগরীর তালিকায় আছে বাংলাদেশের চারটি শহর। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মানিকগঞ্জ; সামগ্রিকভাবে অবস্থান ১৬তম। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২৩তম অবস্থানে রাজধানী ঢাকা, ৬০তম অবস্থানে আজিমপুর ও ৬১তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীপুর।
মূলত বাতাসে পিএম২.৫, পিএম ১০, ওজোন গ্যাস, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইডের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
বাতাসে পিএম বা পার্টিকুলেট ম্যাটার বা ক্ষুদ্র ধাতব কণার পরিমাণ বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। পিএমের আকৃতি নানারকম হতে পারে, সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো পিএম২.৫ আর পিএম১০। পিএম২.৫ কণার ব্যাস ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটারের কম এবং পিএম১০ কণার ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটারের কম; যেখানে মানুষের একেকটি চুলের ব্যাস হয়ে থাকে ৫০ থেকে ৭০ মাইক্রোমিটার।
বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা ১২-এর কম হলে তা বিশুদ্ধ বাতাস বলে ধরে নেয়া হয়। পিএম২.৫-এর পরিমাণ ৫৫ থেকে ১৫০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর ও ২৫০ বা এর বেশি হলে হয় বিপজ্জনক।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর
২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ১০০ শহর মাত্র ছয়টি দেশের। এর মধ্যে ৯৪টি শহরই ভারত, চীন ও পাকিস্তানের।
আইকিউএয়ারের সূচকে দূষিত নগরীর সংখ্যার দিক থেকে ৪৬টি শহর নিয়ে শীর্ষে ভারত, চীনের ৪২টি, পাকিস্তানের ছয়টি, বাংলাদেশের চারটি, ইন্দোনেশিয়ার একটি ও থাইল্যান্ডের একটি।
সব শহরের বাতাসে পিএম২.৫-এর মাত্রা ৫০-এর বেশি। দূষণে শীর্ষ হোতানে বাতাসের গুণগত মান সবচেয়ে খারাপ। গত বছর শহরটির বাতাসে পিএম২.৫-এর পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ১১০ দশমিক ২।
আইকিউএয়ারের এই তালিকায় অবশ্য প্রথম স্থানে রয়েছে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের হোতান শহর। ২০২০ সালে শহরটির গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ১১০.২ একিউআই।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশের নগরী গাজিয়াবাদ। ২০২০ সালে এর গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ১০৬.৬ একিউআই।
তৃতীয় অবস্থানের রয়েছে ভারতের উত্তর প্রদেশেরই অপর নগরী বুলেন্দশহর। ২০২০ সালে এর গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ৯৮.৪ একিউআই।
ভারতের রাজধানী দিল্লির অবস্থান তালিকার ১০ম স্থানে। ২০২০ সালে দিল্লিতে গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ৮৪.১ একিউআই।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার অবস্থান তালিকার ১২৯তম স্থানে। ২০২০ সালে কলকাতায় গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ৪৬.৬ একিউআই।
বাংলাদেশ থেকে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মানিকগঞ্জ। সম্মিলিত তালিকায় ১৬তম স্থানে রয়েছে শহরটি। ২০২০ সালে এর গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ৮০.২ একিউআই।
রাজধানী ঢাকার অবস্থান তালিকার ২৩তম স্থানে। ২০২০ সালে এর গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ৭৭.১ একিউআই।
শীর্ষ এক শ’র তালিকায় থাকা বাংলাদেশের অপর দুই শহর ঢাকার আজিমপুর ও গাজীপুর জেলার শ্রীপুর। সমপরিমাণ ৫৫.৭ একিউআই নিয়ে দুই শহরের অবস্থান তালিকায় যথাক্রমে ৬০ ও ৬১। তালিকায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে অবশ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
১৮তম স্থান নিয়ে পাকিস্তান থেকে বায়ুদূষণে পাকিস্তান থেকে তালিকায় শীর্ষে আছে পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর। ২০২০ সালে এর বায়ু দূষণের মাত্রা ৭৯.২ একিউআই।
অপরদিকে ১৯তম স্থান নিয়ে পাকিস্তান থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাঞ্জাবের অপর শহর বাহওয়ালপুর। এর গড় বায়ু দূষণের মাত্রা ৭৮.৭ একিউআই।
শীর্ষ এক শ’র ভেতর থাকা পাকিস্তানের অপর চার শহর হচ্ছে ফয়সলাবাদ, গুজরানওয়ালা, মুরিদকি ও রাইওয়ান্দ। চারটি শহরই পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৫৪
আপনার মতামত জানানঃ