শান্তি মিশনে থাকা অবস্থায় ও ছুটিতে দেশে ফিরে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বাগেরহাট জেলার পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন এক নারী পুলিশ ইন্সপেক্টর। বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ মামলাটি হয়েছে।
মামলার পর অভিযোগকারীর জবানবন্দি নেয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ১ ধারায় মামলাটি করা হয়।
অভিযুক্ত পুলিশ সুপার শান্তি মিশনে পুলিশের কন্টিনজেন্টের কমান্ডার ছিলেন। সেখানে অবস্থানের সময় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তিনি বাগেরহাটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) কর্মরত বলে জানা গেছে।
ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা মামলার সত্যতা নিশ্চিত রেছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী ও অভিযুক্ত দু’জনই সুদানে জাতিসংঘ শান্তি মিশনের কর্মরত ছিলেন। পেটের সমস্যার কথা বলে ওই পুলিশ সুপার নারী পুলিশ ইন্সপেক্টরকে দুপুরে রান্না করে খাওয়ানোর কথা বলেন। সেখানে যাওয়ার পর তাকে ধর্ষণ করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ জানান, অভিযোগকারী নারী পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে পরিদর্শক পদে আছেন। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সেই পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন এখন বাগেরহাটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) কর্মরত।
নারী কর্মকর্তা মামলার আবেদনে লিখেছেন, ২০১৯ সালের মে মাসে সুদানের দারফুরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যান পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন। তার আগে থেকেই তিনি (নারী পুলিশ) ওই মিশনে ছিলেন। যেহেতু মিশনের বিভিন্ন বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিল, সেজন্য মোক্তার হোসেন নানা ধরনের সাহায্য নিতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং এক পর্যায়ে বিভিন্ন অজুহাতে তার বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।
আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে তার বাসায় তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন। সেই ঘটনার একটি বিবরণও মামলার আবেদনে তুলে ধরেছেন তিনি।
মামলার আবেদনে তিনি বলেছেন, ওই ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয় এজন্য ওই একইদিন ‘হুমকি দিয়ে’ চলে যান মোক্তার হোসেন। পরে ২২ ডিসেম্বর আবারও মোক্তার হোসেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় আসেন। এরপর প্রথমে ভুল হয়েছে বলে ক্ষমা চান এবং তারপরই আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন।
আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই নারীকে ‘মুখে মুখে কলেমা পড়ে বিয়ের আশ্বাস’ দিয়ে আসছিলেন মোক্তার। পরে ছুটিতে দেশে ফিরে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘বিয়ের আশ্বাস দিয়ে’ ঢাকার উত্তরার একটি হোটেলে নিয়ে তাকে আবারও ‘ধর্ষণ’ করেন। পরে ওই বছরের ২৬ থেকে ৩০ জুন সুদানের খার্তুমের একটি হোটেলে এবং ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর ঢাকার উত্তরার হোটেলে ফের তাকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়।
তিনি আবেদনে লিখেছেন, দেশে ফেরার পর তিনি বিয়ে নিবন্ধনের কথা বললে আসামি সেটি এড়িয়ে যেতে থাকেন। সবশেষ ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল ওই নারী রাজারবাগে আসামির বাসায় উপস্থিত হয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি ও কাবিননামা সম্পন্ন করতে বললে আসামি তাতে অসম্মতি জানান।
এসময় আসামির বাসায় তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে সেদিন ওই নারী পুলিশকে ‘মারধর করেন’ বলেও আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে ওই নারী পরিদর্শক আরও উল্লেখ করেছেন, করোনা মহামারির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় মামলার আবেদনে দেরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাল্লা ক্রমশ বেড়েই চলছে। আর এসবের সবকটাই ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে বলে মনে করেন তারা।
তারা বলেন, পুলিশে ঢোকার পর স্বাভাবিক একজনের ভেতরেও আশ্চর্য এক পরিবর্তন আসে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার চূড়ান্ত ভেবে তারা যা ইচ্ছা তা করার মানসিকতা নিয়ে দাপটের সাথে চলতে থাকেন। ফলে ঘর থেকে বাহির কেউ তাদের কুৎসিত হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পুলিশ অফিসার হয়েও ক্ষমতার দাপটে এসব ধর্ষণ অপকর্ম আমাদের সমাজের এক চরম দুর্দশার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীল না হলে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন আরও অসংখ্য অভিযোগ আসতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ