সুনামগঞ্জে ভারতীয় মদ উদ্ধার করে জব্দ তালিকায় না উঠিয়ে বিক্রি করে দেওয়ায় দোয়ারাবাজার থানার দুই উপপরিদর্শককে (এসআই) পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। শুক্রবার (৫ মার্চ) তাদের পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। ক্লোজড হওয়া দুজন হলেন- এসআই নোবেল সরকার ও এসআই অপূর্ব কুমার সাহা। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দোয়ারাবাজার থানার বাংলাবাজার এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন দোয়ারাবাজার থানার এসআই নোবেল সরকার ও অপূর্ব কুমার সাহা।
অভিযানকালে বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউড়া গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে মনির হোসেন এবং উত্তর কলাউড়া গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে মো. আলামিন মিয়াকে ৪ কার্টন অফিসার চয়েসসহ আটক করেন তারা। পরে এক কার্টন অফিসার চয়েস জব্দ দেখিয়ে এই দুজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন এসআই নোবেল সরকার। অন্য তিন কার্টন অফিসার চয়েস তানিয়েল নামে তাদের পরিচিত বাংলাবাজারের এক তরুণের কাছে বিক্রি করে দেন তারা।
গত ২ মার্চ ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক শামীম আখঞ্জি তানিয়েলের ভাই তানভিরের বাংলাবাজারের দোকান থেকে তিন কার্টন অফিসার চয়েস উদ্ধার করেন। এ সময় তানভির এই অফিসার চয়েস দোয়ারাবাজার থানার এসআই নোবেল ও অপূর্ব রেখে গেছেন বলে জানায়।
বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানলে সরেজমিনে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান। প্রাথমিকভাবে তিনি বিষয়টির সত্যতা পান। পরে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই দুই এসআইকে পুলিশ লাইন্স সুনামগঞ্জে সংযুক্ত করার জন্য দোয়ারা বাজার থানা ও পুলিশ লাইন্স সুনামগঞ্জের আর আইকে নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপারের এই নির্দেশে শুক্রবার এই দুই এসআইকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে।
দোয়ারা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজির আলম জানান, মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে সঠিকভাবে জব্দ তালিকা না করায় দুই এসআইকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করার পুলিশ সুপারের নির্দেশের চিঠি বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি পেয়েছেন। এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। পুলিশ সুপার মো মিজানুর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ভূমিকায় মানুষের নিশ্চিন্ত থাকার কথা থাকলেও এখন আতঙ্কে ভোগেন। দেশে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষক ও ডাকাতির ভূমিকায় নেমে পড়া পুলিশ বাহিনী নিয়ে দেশে এক রকম আতঙ্ক চলছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি পুলিশের সরাসরি ডাকাতিতে নেমে পড়ায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে দেশে এক রকম বিরুদ্ধমত চলছে। আর এর পেছনে রয়েছে তাদেরই জোরালো ভূমিকা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের থাকার কথা থাকলেও পুলিশ নিজেই এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের এহেন ভক্ষকের ভূমিকায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে আছে দেশবাসী। এ থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশ বাহিনীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের কড়া নজরদারিও দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ