দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পুলিশের হাতে সাভারে কর্মরত এক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাটুরিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আশরাফুল আলম। তবে পুলিশ বলছে, একে অপরের মধ্যে নিছক ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে উপজেলার দড়গ্রাম ইউনিয়নের সাফুল্লি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির দৈনিক মানবকণ্ঠের সাভার সংবাদদাতা ও অনলাইন রাইজিং বিডির প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা জেলার সাবেক সভাপতি। আরিফুল ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য হলেন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিয়া উজ্জ্বল।
শুক্রবার দুপুরে ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাব্বির বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় বন্ধু মাহবুবের বাসায় বেড়াতে যাই। কয়েকজন মিলে রাত ১২টার দিকে বন্ধুর বাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। সেসময় মাহবুবের এক স্বজনকে পুলিশ জোর করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে- এমন ঘটনা দেখতে পাই। ঘটনার বিষয়ে জানতে এগিয়ে যাই।
‘পুলিশের ওই কর্মকর্তা ‘ওই দৌড়াস কেন?’ বলে মন্তব্য করেন। আমি উনাকে বলি, ‘আপনি তুই তুকারি করে বলছেন কেন?’ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পোশাক পরা আমাকে তুই বললি কেন? আসামি ছিনিয়ে নিতে চাস তুই? এ কথা বলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিতে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, আমি বারবার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এসময় দ্রুত এক কনস্টেবল ছুটে এসে আমার পায়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে আটক করে সিএনজিতে তুলে থানায় ওসি সাহেবের কাছে নিয়ে যান। ওসি আশরাফ সাহেব পুরো বিষয়টি শুনে নিজে দুঃখ প্রকাশ করেন। পরে নিজের গাড়িতে আমাকে বাসায় পৌঁছে দেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাভার উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী মাহবুব আলম বলেন, আরিফ গতকাল আমার এলাকায় ওরশ দেখতে আসছিল। তখন আমার এক আত্মীয়কে পুলিশ টাইনা হ্যাঁচরাইয়া নিয়া যাইতেছিলো। আমরা ওই দিকেই ছিলাম। কৌতুহলবশত আমরা এগিয়ে যাই। আমরা জিজ্ঞাস করছি, ওনারে ওইভাবে নিয়া যাইতেছেন কেন? এ কথা জিজ্ঞাসা করার পর পুলিশ আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। চার জন পুলিশ ছিলেন। সেসময় এএসআই বলেন, অই (আরিফ) আসামি ছিনতাই করতে আসছে, অরে নিয়া চল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাটুরিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিয়া উজ্জ্বল বলেন, রাত ১২টা বাজে ওয়ারেন্টের আসামি ধরতে গেছিলাম। অন্ধকারতো কিছুইতো দেখা যায় না। ওই সময় তো ও (সাংবাদিক) দৌড়ায় আসতেছে। আমি বলছি, দৌড়ায় আসতেছেন কেন আপনি? মানে আমি যে পোশাক পরা নাকি দেখাও যায় না। আমাকে বলছে তুই কেডা? আমি বললাম, আমিতো পুলিশ আসামি ধরতে আসছি। ওনি বলেন- আসামিটা ছাইরা দে তুই। এরকম একটু কথাবার্তা হইছে পরে বলছি চলেন থানায় যাই। পরে ওসির গাড়িতে করে রাতে বাসায় দিয়া আসছি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, পুলিশের বেওপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। একইসাথে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে অভিযুক্তকে বিভিন্ন কৌশলে রক্ষা করে থাকেন। পুলিশের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার ফলে রাষ্ট্রে একদিকে যেমন অরাজকতা তৈরী হয়েছে অন্যদিকে দুর্বৃত্তরাও নিজেদের অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের অপকর্ম দিনদিন এতোই বেড়েছে যে, নিজেদের ঘর সামলাতে গিয়ে অন্যান্যদের সামলানোর জন্য পুলিশ আদৌ কোনো সময় পাবে কিনা সেবিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ